তোমাকে হুমায়ূন আহমেদ Pdf ebook

বইয়ের নাম : তোমাকে
লেখক :  হুমায়ুন আহমেদ Pdf
প্রকাশক : অনন্যা
১ম প্রকাশিত : ১৫ই জুন ১৯৯৪
ক্যাটাগরি : উপন্যাস
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৬৪ পৃষ্ঠা

#লেখকের_পরিচয় : ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর হুমায়ুন আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার পাশাপাশি তিনি পলিমার রসায়ন নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন। তাঁর লেখা ১ম উপন্যাস হলো “নন্দিত নরকে”। যার মাধ্যমে তিনি পাঠকমহলে বেশ জনপ্রিয়তা লাভসহ নন্দিত হয়। এছাড়াও উপন্যাস সমগ্র, হিমু সমগ্র, মিসির আলি সমগ্র, সায়েন্স ফিকশন, গল্প, ভৌতিক, ভ্রমণ, শুভ্র, শিশুসাহিত্য সহ আত্নজীবনী ও স্মৃতিকথা লিখে দেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিখ্যাত লেখক হিসেবে মর্যাদা পান। ২০১২ সালের ১৯ শে জুলাই মৃত্যুবরণ করেন পরবর্তীতে তাঁকে নুহাশ পল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
#বইয়ের_ধরণ : বাংলাদেশের কিংবদন্তী লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর একটি অসাধারণ উপন্যাস “তোমাকে”। মূলত উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট সাধারণ পারিবারিক একটি গল্পকে ঘিরে। মায়ের অনুপস্থিতিতে মেয়েদের প্রতি বাবার একক ভালোবাসা এবং দায়িত্ব যেমন ফুটে উঠেছে ঠিক তেমনি বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীর যে মানসিকতা, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যে প্রবল আকর্ষন সহ পরকীয়ার সম্পর্কের কথা যেটি নিয়ে সমাজের প্রতিকুলতার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। সর্বোপরি মিশ্র উপন্যাস হিসেবেও বলা যেতে পারে।
#বইয়ের_সারসংক্ষেপ : গল্পের কথক যার নাম বিলু। তারা ২ বোন জমজ,নীলু আর বিলু।যদিও তাদের বাবা তাদের কাব্যিক নাম রেখেছিল কান্না আর রাত্রি। এছাড়াও তাদের ছোট একটা বোন আছে যার নাম সেতারা। গল্পের ১ম দৃশ্যে দেখা যায় তাঁদের মা রেণু পরিবার ছেড়ে তাদের ম্যানেজারের সাথে পালিয়ে যেতে। মায়ের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে সমাজের লোকদের কাছ থেকে কটু কথা শুনা সহ তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। যদিও পরবর্তীতে তাদের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করতে রাজি হয়নি বরং নীলু আর বিলু চেয়েছিলো যেন তাদের বাবা বিয়ে করে। কারণ তাদের মতে একজন মা ছাড়া পুরো পরিবারটাই অসম্পূর্ণ। এছাড়াও বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে তারা মায়ের অভাববোধ করতো। নীলু-বিলুর প্রতি তাদের বাবার দায়িত্ব এবং বাবা – মেয়ের সম্পর্কের সুন্দর বর্ণনা লেখক তুলে ধরেছেন। নীলুর নাম কান্না হলেও সে সবসময় কারণে-অকারণে শুধুই হাসতো। শাড়ি পড়তে, আড্ডা দিতে অনেক পছন্দ করতো তবে লেখাপড়ায় ছিলো অমনোযোগী। রকিব নামের অংক লেকচারার এর প্রতি তাঁর ভালোলাগা কাজ করতো পাশাপাশি তাঁরা চিঠি আদান – প্রদান করতো। অপরদিকে বিলু ছিলো নীলুর বিপরীত। সে ছিল গম্ভীর, কম কথা বলা, বন্ধু-বান্ধব দের সাথে কম মেলামেশা সহ একা থাকতে পছন্দ করতো। তাছাড়াও সে ছিলো প্রকৃত মেধাবী। সেতারা ভালো গান গায় একটা সময় শিশুসংগীত সম্মেলন থেকেও স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হয়। যদিও সে বিলুর মতোই গম্ভীর তবে সে নীলুর সাথে থাকতে পছন্দ করতো। সবাই ভেতরে ভেতরে রেণুর কথা মনে করলেও সেতারা প্রকাশ্যে তাঁর মায়ের কথা মনে করত। নীলু আর বিলু দু’বোন দেখতে হুবহু একই রকম হলেও তাদের আচরণের মধ্যে বেশ পার্থক্য সহ তাদের বনিবনা ভালো ছিলো না ,তারা দুই জন কাছে থেকেও যেন অনেক দূরে থাকত। যদিও তাঁদের মধ্যকার এই দূরত্ব বিলু শহরের কলেজে পড়তে এসে শেষ হয়। তাঁদের দোতলায় নাজমুল চাচা নামের এক ভাড়াটে লোক থাকতো যদিও আপনজনের চেয়েও কম ছিলো না।সবসময় তাদের নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ, মায়া-মমতা আর শাসন করা সহ লেখাপড়ায় অনুপ্রেরণা দিত। একটাসময় তাদের বাবা অতিরিক্ত মদ্যপান করার কারণে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে যার ফলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আর সেদিনই তাদের মা রেণু তাদের বাবাকে দেখতে আসেন। একদিকে নতুন সম্পর্কের যেমন সূচনা হচ্ছে অপরদিকে আরেকটি সম্পর্কের ইতি টানা হচ্ছে আর সেই ইঙ্গিত লেখক ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরেন।
#পাঠ্য_উপলব্ধি : বইয়ের নাম দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো কোনো প্রেমের গল্প হবে পরে বইয়ের ১ম পৃষ্ঠায় জমজ বোনদের কাহিনী দেখে ইন্টারেস্টিং মনে হলো। স্বামী, সন্তানদের ছেড়ে অন্য কোনো পুরুষের হাত ধরে রেণুর পালিয়ে যাওয়া আমাকে বেশ ভাবিয়েছে। স্ত্রীর এমন বিশ্বাসঘাতকতার পরেও দ্বিতীয় বিয়ে না করা সহ স্ত্রীর প্রতি নীলুর বাবার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আমাকে মুগ্ধ করেছে। মেয়েদের প্রতি বাবার ভালোবাসা হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো এবং সেটা যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার। দুবোন জমজ হওয়ার কারণে রকিব বারবার বিলুকে নীলু ভেবে বিলুর সাথে প্রেমালাপ করাও আমাকে হাসিয়েছে। তবে শেষের দিকে নীলুর মায়ের উপস্থিতি এবং নীলুকে দেয়া রকিবের চিঠি সবমিলিয়ে মনে হচ্ছিলো যেন সুখের ঢেউ বয়ে যাবে এ পরিবারে কিন্ত নীলুর বাবার মৃত্যুর আভাস আমাকে আশাহত করে। পুরো উপন্যাস পড়ার পর মনে হলো জোর করেই গল্পটার ইতি টানা হয়েছে। অথচ গল্পটা অসম্পূর্ণ যেন এখনো অনেক কিছুই হওয়ার বাকি ছিলো। সর্বোপরি ভালো লাগার মতো একটি উপন্যাস এবং পাঠকদের মনে দাগ কাটবে বলে আমার বিশ্বাস।


#বইয়ের_ভেতরকার_কিছু মনোমুগ্ধকর উক্তি বা লাইন :
১।

মানুষের মন খুব বিচিত্র জিনিস।একবার কোনো কিছুতে মন বসে গেলে তা ফেরানো যায় না।


২।

রাগের মাথায় অনেকে অনেক কিছু বলে, সে সব মনের মধ্যে পুষে রাখা ঠিক না।


৩। 

মানুষ যখন হাসে তখন তার সঙ্গে সমস্ত পৃথিবী হাসে। কিন্ত সে যখন কাঁদে, তার সঙ্গে আর কেউ কাঁদে না। কাঁদতে হয় একা একা।


৪। 

পৃথিবীতে এত কষ্ট কেন থাকে? কেন এত দুঃখ চারদিকে?


৫। 

অনেক সময় আমরা যা করতে চাই করতে পারি না। কেন পারি না তাও জানি না। পরে তা নিয়ে কষ্ট পাই।

৬।

কান্নার মতো গভীর তো কিছু নেই। একজনের দুঃখ অন্যজনকে স্পর্শ করে না। কিন্তু একজনের চোখের জল অন্যকে স্পর্শ করে।


#পরিশেষে_নিজস্ব_অভিমত : গল্পের রেণুর পরকীয়ার কারণেই নীলুর বাবা তীব্র মানসিক যন্ত্রনায় পতিত হয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করে যার ফলে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। একইসাথে পরকীয়ার প্রভাবও তিনবোন দের উপর পড়ে। একটি সুন্দর পরিবারকে ধ্বংস করতে এই পরকীয়াই যথেষ্ট, যা আমার একান্ত উপলব্ধি। তাই পরকীয়া নামক অভিশাপকে সমাজ থেকে নির্মূল করতে হলে নিজ নিজ জায়গা থেকে আবেগ দিয়ে নয় বরং বিবেক দিয়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে আমি মনে করি।

তোমাকে হুমায়ুন আহমেদ Pdf free ebook link: Click here

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *