সেবা প্রকাশনী বই Pdf ebook (All)
সেবা প্রকাশনী ওয়েস্টার্ন pdf ebook – sheba prokashoni books free ebook
কাজী মাহবুব হোসেনের ২৯ টি ওয়েস্টার্ন পিডিএফ
তাহের শামসুদ্দীন
কাজী শাহনূর হোসেন
আলীম আজিজ
মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ
মাসুদ আনোয়ার
আবু মাহদী
সায়েম সোলায়মান
ইসমাইল আরমান
ইফতেখার আমিন
জাহিদ হাসান
সন্ত্রাস-সার্জেন হক বিপ্লব
ছোবল-আতিকুর রহমান
দুর্বৃত্ত -আসাদুজ্জামান+বাজি -বজলুর রহমান
শিকারী – হিফজুর রহমান
জেফ কার্টার – শাহবাজ খান
টেন ওয়াগনস– তানভির হাসান
অশুভ চক্র – টিপু কিবরিয়া
শেষ মার – প্রিম রিজভী তৌহিদ
এবার ফেরাও – মইনুল আহসান সাবের
মরুসৈনিক – আলীমুজ্জামান
বদলা চাই – মোঃ দেলোয়ার হোসেন
জনক – মোঃ খালেদুল ইসলাম খান
লোন রাইডার – সুমন আহসান
লোভ – সানোয়ারুল হক রিজভী
মৃত্যু উপত্যকা – আহমেদ শরীফ
অপরাজেয় – তানভীর মৌসুম
প্রতিঘাত – সানোয়ারুল হক
ট্রেইল টু হেল – তুহিন রহমান
ত্রাহি – মনসুর হক
অপেক্ষা – আহমেদ ইনাম
সকল সেবা প্রকাশনী pdf ebook
ক্রেডিট: Masroor ur Rahman Abir ১৯৯৭ এর মাঝামাঝি। স্কুল পাশ করে সবেমাত্র ঢাকায় এসে উঠেছি। ঢাকা শহরের একেবারে কিচ্ছু চিনি না।
থাকি ঢাকা কলেজের উল্টোদিকে এক দালানে। ওখান থেকে এমনকি নিউমার্কেট আর নীলক্ষেতের পথও চিনি না। কিন্তু ঢাকা শহরের একটা ঠিকানা আমি জানি। ২৪/৪ সেগুনবাগিচা। প্রিয় সেবা প্রকাশনীর ঠিকানা।
ঢাকায় আসার দুই-তিন দিন পরই বাসা থেকে বের হলাম। সেবা প্রকাশনী যাবো। ঢাকা কলেজের সামনে থেকে কোন পথে সেগুনবাগিচা যেতে হবে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, কিন্তু দরদাম ঠিক করে রিকশায় চড়ে বসলাম। ১৫ টাকা ভাড়া। আমি রিকশায় বসে গাউছিয়া, শাহবাগ, শিশু পার্ক, রমনা পার্ক এসব নতুন নতুন জিনিস দেখতে দেখতে এগুতে থাকি। মনের মধ্যে কতো কতো পুরনো স্মৃতির আনাগোনা!
সেবা প্রকাশনীর বই পড়ার অভ্যাস প্রায় শিশুকাল থেকেই। তিন গোয়েন্দা দিয়ে শুরু হলেও নেশা হয়েছিলো কিশোর ক্লাসিক আর অনুবাদ সিরিজের। স্কুলজীবনেই তিন গোয়েন্দার প্রায় একশো বই, তখন পর্যন্ত কিশোর ক্লাসিক আর অনুবাদ সিরিজের বের হওয়া সবগুলো বই, কুয়াশা সিরিজের সবগুলো বই, ওয়েস্টার্ন সিরিজের অনেক বই, আর মাসুদ রানা সিরিজের দেড়শো-দুইশো বই পড়া শেষ। একটা সময়ে নিয়মই ছিলো প্রতিদিন দুপুর বিকেল রাত মিলিয়ে কমপক্ষে একটা বই শেষ করা। সপ্তাহের সাত দিন, মাসের ত্রিশ দিন।
সেই থরথর আবেগে মোড়া অনন্যসাধারণ বইগুলোর সূতিকাগারে পৌঁছে যাবো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই, ভেবেই আমি উত্তেজনায় অধীর।
তরুণ কাজী আনোয়ার হোসেন সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলা ভাষায় স্পাই থ্রিলার লিখবেন, আর বই বের করবেন নিজেরই প্রকাশনা সংস্থা থেকে। সেই সময়ের জন্য বিরাট সাহসী সিদ্ধান্ত তো বটেই। কিন্তু বাবা বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ কাজী মোতাহার হোসেন যখন এমন অদ্ভুত সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়ে ছেলেকে দশ হাজার টাকা দান করলেন, ছেলেকে তখন আর পায় কে?! ট্রেডল মেশিন আর কয়েকটা টাইপরাইটার সহ আস্ত একটা প্রেস বসিয়ে ফেললেন পৈত্রিক নিবাস সেগুন বাগান এলাকায়। এলাকার নামে নাম মিলিয়ে প্রকাশনীর নাম রাখলেন ‘সেবা প্রকাশনী’। ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হলো বাংলা থ্রিলার বই ‘কুয়াশা’। আর ১৯৬৬ সালে বের হলো স্পাই থ্রিলার মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম বই ‘ধ্বংসপাহাড়’। একসময় এলাকার নাম সেগুন বাগান থেকে সেগুনবাগিচা হয়ে যায়, আর সেবা প্রকাশনী ততোদিনে পৌঁছে গেছে লাখ লাখ কিশোর-তরুণের হৃদয়ে। তুমুল গতিতে চলতে চলতে এই ৫৭ বছরে সেবা প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার বই।
খুব কম দামে পাওয়া যায় আর প্রতিটা বইয়ে থাকে এক সম্মোহনী আকর্ষণ, তাই পাঠক এসব বই পড়েছেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো, নেশায় বুঁদ মাতালের মতো। এখন অনেক নতুন বই প্রকাশের সময় তিনশো কপি বিক্রি হবে কিনা তাই নিয়ে প্রকাশক চিন্তায় থাকেন, অথচ সেবা’র বই তখন নির্দ্বিধায় ত্রিশ হাজার কপি ছাপিয়ে ফেলা হতো, আর এদের অনেক বইই নিঃশেষ হয়ে খুব দ্রুতই পরবর্তী সংস্করণ ছাপাতে হতো।
আমি দুরুদুরু বুকে দাঁড়াই ২৪/৪ সেগুনবাগিচার সামনে। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সাইনবোর্ডটা দেখি। ওটা দেখেই কেমন যেন আপ্লুত হই। আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকি। নিঃশব্দে কিছু বই কিনে ধীরে ধীরে বাসায় ফিরি। তেমন কারো সাথেই কথা হয় না। কিন্তু বুকের ভেতরে তখন কেমন এক অদ্ভুত খুশির রেশ। সেবা’র অজস্র বই যেখান থেকে ছাপা হয়ে বের হয়েছে, সেবা’র লেখকেরা যেখানে সর্বক্ষণ হেঁটে বেড়ান, ঠিক সেখানেই ঘুরে গেলাম আমি, এই অনুভূতিটাই এক অস্ফুট আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে হৃদয়ের মাঝে প্রতিধ্বনি তুলতে থাকে।
এরপর ওই ঠিকানায় যাওয়াটা নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়। দোতলায় সেবা প্রকাশনীর অফিসে যাই, দুই দালানের মাঝের কাঠের সেতুটা পার হই, গোডাউনে গিয়ে পুরনো বই খুঁজি। পানির দরের বই কিনে আনি আরো বেশি তরলীকৃত দামে।
একদিন মুখ ফুটে বলেই ফেলি যে কাজীদা’র সাথে দেখা করতে চাই। কিন্তু শুনতে পাই, উনি সাধারণত কারো সাথে দেখা করেন না। রহস্যময় পুরুষ বরাবরই অন্তরালে থাকতে পছন্দ করেন। তবে চাইলে উনার অটোগ্রাফ যোগাড় করা যায়। বই কিনে উপরে উনার বাসায় পাঠিয়ে দিলে উনি অটোগ্রাফ দিয়ে পাঠিয়ে দেন। একটু উৎকণ্ঠা নিয়েই উপরে পাঠিয়ে দিই মাসুদ রানার প্রিয় বই ‘অগ্নিপুরুষ’। কিছুক্ষণ পরই মুগ্ধ হয়ে দেখি আমার বইয়ে কাজীদা’র হাতের লেখা, স্থানু হয়ে অনুভব করি আমার প্রতি তাঁর শুভকামনা।
গত বেশ কয়েক মাস ধরে থাকি সেগুনবাগিচায়। মুদি দোকানে সদাই কিনতে যাই, সেলুনে চুল কাটাতে যাই, রাস্তার পাশে ফল কিনতে যাই। প্রতিবার আড়চোখে তাকাই রাস্তার পাশের উঁচু সে দালানটার দিকে। ওখানেই থাকেন আমাদের কৈশোর-তারুণ্যের নায়ক, আমাদের এই সর্বগ্রাসী বই পড়ার অভ্যাসের পেছনের মূল কারিগর, এতো এতো প্রচার প্রচারণার যুগেও সারাজীবন পর্দার আড়ালে থাকা কীর্তিমান পুরুষ, আমার মতো লক্ষ-কোটি মানুষের প্রিয় ব্যক্তিত্ব কাজী আনোয়ার হোসেন। আড়চোখে তাকাই, এরপরে একবার ভালো করে দেখি, তারপরে চলে যাই।
দু’দিন আগে অফিস শেষে হঠাৎ কী জানি মনে হলো। বাসায় না ফিরে চলে গেলাম অনেক দিনের চেনা সে ঠিকানায়। দালানের বাইরে এখন গেট আর গ্রিলের জঞ্জাল বেশি। দোতলার অফিসে যাওয়ার অনুমতি নেই, বিরল বইয়ের গুপ্তধনে ভরা সে গোডাউনও নাকি আর নেই। শুধুমাত্র তালিকা ধরে বইয়ের অর্ডার দিলে উপর থেকে এনে দেয়া হয়।
প্রায় পনেরো বছর ধরে মাসুদ রানা পড়া হয় না। তাই নতুন বইগুলো সম্পর্কে ধারণা কম। তবে বিভিন্ন সময়ে এই ফেসবুক গ্রুপের নানান আলোচনা দেখে মনে হয়েছে গত বিশ বছরে প্রকাশিত মাসুদ রানার মধ্যে ‘হ্যাকার’ একটা উল্লেখযোগ্য বই। তাই অন্যান্য বইয়ের সাথে সেটারও অর্ডার দিই।
হঠাৎ কী মনে করে নিচে বসে থাকা মুকুন্দ নামের লোকটাকে বলি, এখন কি কাজীদা’র অটোগ্রাফ নেয়া যায়? শুনলাম যায়, কিন্তু এই দুপুর তিনটায় কাজীদা রেস্ট নেন, তাই এখন হবে না। খুব করে অনুরোধ করলাম। লোকটা কথা না দিলেও আমার নাম লিখে নিয়ে উপরে চলে যান।
বুক ঢিব ঢিব নিয়ে নিচে বসে থাকি আমি। সময়টা কি একটু ধীরে বইছে? বেশ খানিকক্ষণ পরে ফিরে এসেই আমাকে বইয়ের মোট দাম বলতে থাকেন। আমি ওই প্রসঙ্গ পুরোপুরি উপেক্ষা করে সরাসরি প্রশ্ন করি, অটোগ্রাফ পেয়েছেন? উনি জানান, পেয়েছেন। উপরে বাসায় গিয়ে উনি ‘সাহেবের’ অটোগ্রাফ নিয়ে এসেছেন।
আমি বইটা খুলে লেখাটার উপরে পরম মমতায় আঙ্গুল বুলাই।
বাইরে তখন মেঘলা আকাশ। কিন্তু আমার বুকের ভেতরে ঝলমলে রোদ।