Paradoxical sazid part 1, 2 pdf download & Review
বই রিভিউঃ প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ
আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বই- প্যারাডক্সিকাল সাজিদ। জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে আমার। হিদায়াতের শুরুটাও হয়েছিলো এই বইটা পড়া থেকে, আলহামদুলিল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ ছোটবেলা থেকে বই পড়তে খুব ভালোবাসি। গল্প, উপন্যাস,ঠাকুমারঝুলি,এডভেঞ্চার, গোয়েন্দা কাহীনী, ভ্রমণকাহীনী, সাইন্স ইত্যাদি বিষয়ে অনেক বই পড়া হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। কিন্ত ইসলামি বই যে অসাধারণ হতে পারে, ইন্টারেস্টিং হতে পারে তা আমার জানাই ছিলো না। শুনতাম যে ইসলামি বইগুলো শুধু বড়দের পড়ার জন্য, ছোটরা এসব বুঝে না( যদিও আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানে ছোটদের জন্যে অনেক মজার মজার ইসলামি বই আছে)। তখন ইসলামি বই সম্পর্কে আমার ধারণা ছিলো খুবই কম।
২০১৭সালের কথা। একদিন গিয়েছি প্রিয় বান্ধবীর বাসায়। হঠাৎ খেয়াল করলাম বিছানার উপর একটা বই। নাম হলো প্যারাডক্সিকাল সাজিদ। আমি তখন বান্ধবীকে জিজ্ঞাসা করলাম দোস্ত এটা কিসের বই? নামটা কেমন জানি আনকমন আনকমন লাগছে। ও বললো দোস্ত এটা ২-৩দিন আগে সেজো আপু কিনেছে। এটা একটা ইসলামি বই বাট সাইন্টেফিকও। খুবই ইন্টারেস্টিং। আমি বললাম ওয়াও! সাইন্টেফিক ইসলামি বই! তুই পড়েছিশ? ও বললো অল্প একটু পড়েছিলাম। চল আমরা একসাথে পড়ি। আমি বললাম চল।
পড়তে লাগলাম দুজন মিলে। আমি পড়ছিলাম আর মুগ্ধ হচ্ছিলাম। প্রথমে সাজিদ ছিলো অবিশ্বাসী। পরে বন্ধু আরিফের বিভিন্ন যুক্তি শুনে চিন্তা-ভাবনা করে আলহামদুলিল্লাহ সে হিদায়াত পেয়েছে৷ তার পর সে ইসলাম নিয়ে অনেক স্টাডি করে, রিসার্চ করে অনেক জ্ঞান আহরণ করেছে। নাস্তিকদের একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিয়ে ইসলাম নিয়ে তাদের কটুক্তিগুলোকে ভেঙ্গে চুড়ে শেষ করে দিয়েছে। মিথ্যার ধুম্রজালকে মুছে দিয়ে সত্যের আয়নাকে তুলে ধরেছে সকলের সামনে।
“বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।”(সূরাহ বনী ইসরাইলঃ ৮১)
ঐদিন বান্ধবীকে বললাম প্লিজ আমাকে এই বইটা একটু দিবি। আমি ইন শা আল্লাহ কালকের মধ্যে শেষ করে তোকে দিয়ে যাব। ও বললো কোনো সমস্যা নেই, নে।
বাসায় এসে আবার পড়া শুরু করলাম। একটার পর একটা পেজ উল্টাচ্ছি আর মনে হচ্ছিল এক অন্যরকম শান্তি আমাকে ঘিরে রাখছে যেন। পড়ছিলাম আর জানতে পারছিলাম ইসলামের কোনো বিধানই অযৌক্তিক নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা যা কুরআনে বলেছেন প্রত্যেকটার পেছনেই যৌক্তিক কারণ আছে। বইয়ে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি পেয়েছি এই প্রশ্নগুলো এর আগে আমাকে অনেকে করেছেন। কিন্ত আমি তখন কোনো উত্তর দিতে পারিনি। এমনকি স্কুলের হিন্দু টিচাররা অনেক প্রশ্নে জর্জরিত করতেন কিন্ত তাদের সামনে আমার বলার কিছুই ছিলো না। কারণ আমি তো কিছু জানিই না, তাহলে বলবো কিভাবে? খুব খারাপ লাগত তখন যে আমার দ্বীন সম্পর্কে আমি এতটাই কম জানি যে মানুষ আমাকে এধরণের কোনো প্রশ্ন করলে আমি উওর দিতে পারছি না!
আমারও অনেক প্রশ্ন ছিল দ্বীন নিয়ে। অনেক খুঁজেছি এগুলোর উত্তর কিন্ত পাচ্ছিলাম না। বিশেষ করে তাকদীর নিয়ে। কিন্ত আলহামদুলিল্লাহ এই বইয়ে আমি সেগুলোর উত্তর পেয়েছি। মাশাআল্লাহ আরিফ আজাদ ভাই খুব সহজভাবে ইন্টারেস্টিং ভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। এই বইটা পড়ার পর মনে হয়েছে আমাদের ইসলামটা এত সুন্দর অথচ আমি এগুলো জানতামই না!!
কিন্ত এই বইটি আমাকে দেখিয়েছে এক আলো। যে আলোতে আমি খুঁজে পেয়েছি চারপাশের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সরল পথ। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে কুরআন আল্লাহ তা’লা আমার জন্য পাঠিয়েছেন যেন আমি জানতে পারি কে আমাদের সৃষ্টিকর্তা, কত নিয়ামত দিয়েছেন তিনি আমাদের, জানিয়েছেন কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল, কি করলে আমি জান্নাতে যেতে পারবো আর কোন কর্ম আমাকে নিয়ে যাবে জাহান্নামে। অথচ আমি সেই কুরআন নিয়েই কখনো ভাবিনি, কুরআনের সাথে সময় কাটাইনি।
আমরা অনেক সময় আমাদের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে কোরআনের কিছু কিছু আয়াত দেখে আমাদের পৃথিবী, মহাবিশ্ব, জীবন, মরণ ইত্যাদি দিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে আটকে যাই। বুঝতে পারি না যে এটা কিভাবে হলো, ওটা কিভাবে হয়। আর তখন অনেকে সে বিষয়গুলো নিয়ে রিসার্চ করার আগেই নিজের স্বল্প জ্ঞানে ধরে নেয় যে যেহেতু দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞানের সাথে মিলছে না তার মানে এখানে ভুল আছে (নাউযুবিল্লাহ)। ঠিক তখনই এই বইটি আমাদের চোখ খুলে দেয় এক বিশাল দিগন্তের দিকে। বিজ্ঞান যে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল, আর কোরআন যে শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত একই কথা বলে যাবে তার প্রতিফলন দেখা যায় বইটির পৃষ্ঠায়, পৃষ্ঠায়।
অবাক হয়েছিলাম যখন বইটির প্রথম দিকে এটা জেনেছি যে, পৃথিবী আর সূর্য নিয়ে গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমি যে বলেছিলেন,”সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে”, এই থিওরিটা বিজ্ঞান মহলে টিকে ছিল পুরো ২৫০ বছর! ২৫০ বছর পৃথিবীর মানুষ, যাদের মধ্যে আবার বড়ো বড়ো বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ছিল, তারাও বিশ্বাস করত যে, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে। এই ২৫০ বছরে তাদের মধ্যে যারা যারা মারা গেছে, তারা এই বিশ্বাস নিয়েই মারা গেছে যে, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে!!!
তাহলে কিভাবে বিজ্ঞান দিয়ে মানুষ কোরআনকে বিচার করে অথচ এই কোরআন হলো আমাদের সৃষ্টিকর্তা, সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, আমাদের রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লার বাণী।
আল্লাহ তা’লা বলেন,
“যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি করে জানবেন না? তিনি সূক্ষ্মজ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত। (মুলকঃ ১৪)
পক্ষান্তরে এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে এতো অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেত। (নিসাঃ ৮২)
তাকদির নিয়ে বিভান্তি,কেন আল্লাহ মন্দ কাজের দায় নেন না,স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো টাইপের অদ্ভত প্রশ্ন,কুরবানি নিয়ে সংশয়, আল-কুরআন মানবরচিত কি না, কুরআনে আকাশের আয়াত নিয়ে বিভ্রান্তি, আয়িশা র. ও মুহাম্মাদ স. এর বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন, জাহান্নাম কেন থাকবে যদি আল্লাহ দয়াবান হন, কুরআন মতে পৃথিবী গোলাকার না সমতল, আল্লাহ অন্তরে মোহর মারেন কেন, কুরআনে বিজ্ঞান, মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা করো কেন বলা হয়েছে ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে কারো প্রশ্ন থাকলে এই বইটি তাকে অনেক বেশি সাহায্য করবে ইন শা আল্লাহ।
আল্লাহর অশেষ দয়ায় লেখক নাস্তিকদের নাস্তিক্যবাদ নিয়ে অহংকার চূর্ণ বিচুর্ণ করে দিয়েছেন। কুরআন অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক ধর্ম নয় তা প্রমাণ করে দিয়েছেন।
প্রশ্নগুলোর উত্তর সাইন্টিফিকেলি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। বইটি পড়ার সময় পাঠক বইয়ে থাকা বিভিন্ন কেরেক্টারের মানুষের চিন্তা-চেতনার সাথে নিজের অথবা নিজের চারপাশের মানুষের চিন্তা-চেতনার সাথে মিল খুঁজে পাবেন ফলে কাহিনিগুলোর সাথে নিজেকে খুব সহজে রিলেট করতে পারবেন।
আলহামদুলিল্লাহ বইটির লেখক অনেক লেখককে অনুপ্রাণিত করেছেন সত্য নিয়ে কলম ধরতে। খুব ভালো লাগে যখন বিভিন্ন বইয়ের শুরুতে দেখি লেখকরা বলেন যে আরিফ আজাদ ভাইয়ের প্যারাডক্সিকাল সাজিদ থেকে অণুপ্রাণিত হয়ে কলম ধরেছি আলহামদুলিল্লাহ।
এছাড়া এই বইটি যখন আপনি পড়বেন তখন মনে হবে আপনি এমন এক জ্ঞানের সাগরে ডুব দিয়েছেন যে জ্ঞান আপনাকে আল্লাহর সৃষ্টির বিশালতা সম্পর্কে জানাবে। আল্লাহর এত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সৃষ্টি, অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ,সৌন্দর্যমন্ডিত প্রকৃতির অপরূপ মাধুর্য নিয়ে আপনাকে এমন এমন বিষয় জানাবে যা আপনি হয়তো আগে জানতেন না অথবা এত সহজ আর ইন্টারেস্টিং ভাবে জানেননি। আপনার অন্তরে যদি কোনো অন্ধকার কুঠুরি থাকে তবে সেই কুঠুরিটিতেও জ্বলবে আলোর শিখা ইন শা আল্লাহ।
আর এই বইটি আপনাকে অনেক রিফ্রেশ করবে। কারণ বিজ্ঞানের জটিল জটিল বিষয়কে লেখক বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে আপনি গল্পের ছলে অনেক কিছু শিখে ফেলবেন।
আমার মনে হয় যে এই বইটি সবার পড়া উচিত। এই বইয়ে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আছে সেগুলো সকল মুসলিমের জানা থাকা উচিত। যারা কখনো বই পড়েন না, এই বইটি পড়ার পর তারাও বই পড়া শুরু করে দিবে ইন শা আল্লাহ।
বইটি আপনাকে আল্লাহ তা’লার খুব কাছে নিয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। আপনাকে কুরআনের সাথে সময় কাটাতে,কুরআনকে ঘিরে জীবন যাপিত করতে উদ্বুদ্ধ করবে ইন শা আল্লাহ।
আল্লাহ তা’লা বলেন,
“আর আমি তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি?”
(সূরা আল কমার: ১৭)
আল্লাহ তা’লা নিজেই বলেছেন যে এই কুরআনকে বোঝার জন্য সহজ করে দিয়েছেন সেই সাথে আমাদেরকে প্রশ্ন করছেন যে কোনো উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি?
তাহলে আমরা কি আল্লাহ তা’লার বাণীর উপদেশ গ্রহণকারী হবো না?
কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ তা’লা বলেন,
“তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না?”
(সূরা নিসা: ৮২)
এ যেন আমার কথাই বলা হচ্ছিলো। আলহমাদুলিল্লাহ এর পর থেকে কুরআন পড়া শুরু করলাম অর্থসহ। তখন মনে হচ্ছিল আমার মালিক আমাকে রহমের চাদর দিয়ে ঢেকে নিচ্ছেন। এতটা শান্তি ঢেলে দিয়েছিলেন অন্তরে।
তারপরেই আস্তে আস্তে আরো বই কিনে পড়া শুরু করলাম। জানতে লাগলাম একটু একটু করে আলহাদুলিল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ এই বইটি অনেক বান্ধবী, আত্বীয়-স্বজনকে উপহার দিয়েছি। তাঁরাও বলেছেন অসাধারণ বই! আমার অনেক প্রিয় বান্ধবীরাও আলহামদুলিল্লাহ, এই বইটি পড়ার পর দ্বীনের পথে ফিরে এসেছে।
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা’লার যিনি আমাকে হিদায়াতের আলোয় আলোকিত করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমার জীবনকে পরিবর্তন করায় এই বইটির অবদান অনেক, আলহামদুলিল্লাহ। দোয়া করি, আরিফ আজাদ ভাইকে আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের জন্য কবুল করুন। তাঁর লেখনীতে অনেক অনেক বারাকাহ দিন। তাঁকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গায় সফলতা দান করুন। লেখকসহ গার্ডিয়ান পাবলিকশনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন ভাইদেরকে কবুল করে নেন। দুনিয়া ও আখিরাতে সাহায্য করেন। আখিরাতের প্রতিটি ধাপ সহজ করে দেন, বিনা হিসাবে জান্নাত দেন। আমিন ইয়া রব্বাল আলামিন।