Books
বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনী pdf free download
oshomapto attojiboni book PDf download – অসমাপ্ত আত্মজীবনী শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী সংকলন। এ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চিনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কি, নেপালি, স্পেনীয়, অসমীয়া ও রুশ ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বইটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বন্ধুবান্ধবরা বলে, “তোমার জীবনী লেখ”। সহকর্মীরা বলে “রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।” আমার সহধর্মিনী একদিন জেল গেটে বসে বললো, বসেই তো আছি লেখ তোমার জীবনের কাহিনী।” বললাম, লিখতে যে পারিনা; আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোন কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না । শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।”
একদিন সন্ধায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে জমাদার সাহেব চলে গেলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট্ট কোথায় বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তার সাথে আমার পরিচয় হলো। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্যে পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তা স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।
হঠাৎ মনে হল লিখতে ভালো না পরলেও ঘটনা যতদূর মনে আছে লিখে রাখতে আপত্তি কি? সময় তো কিছু কাটবে। বই ও কাগজ পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে দুই চোখ দুটো ব্যথা হয়ে যায়। তাই খাতাটা নিয়ে লেখা শুরু করলাম। আমার অনেক কিছুই মনে আছে। স্মরণশক্তি ও কিছুটা আছে। দিন-তারিখ সামান্য এদিক ওদিক হতে পারে, তবে ঘটনা
গুলো ঠিক হবে বলে আশা করি। আমার স্ত্রী যার ডাক নাম রেনু— আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেনু আরো এক দিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম।
বইয়ের সংক্ষিপ্তসার:-
আত্মজীবনী সাধারণত শুরু হয় নিজের কথা বা নিজের গুণকীর্তন দিয়ে।কিন্তু ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র শুরুটা হয়েছে একটু অন্যভাবে। এখানে তিনি নিজের কথা না বলে তাঁর রাজনৈতিক গুরু শহীদ সাহেবের( হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী) কথা দিয়ে শুরু করেছেন–’ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা।কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হলো। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম।কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি একইসাথে আত্মজীবনী ও রাজনৈতিক দলিল। নিজের জীবন কাহিনীর মধ্য দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর বিবরণ। অসমাপ্ত এ লেখায় ১৯৩৮ থেকে ১৯৫৫ সালের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা রয়েছে। ১৯৩৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক এবং শ্রমমন্ত্রী শহীদ সাহেব ( হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী) একটি সভা উপলক্ষে গোপালগঞ্জ যান। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক্সিবিশনে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব। সভাশেষে মিশন স্কুল পরিদর্শনে গেলে তার সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম কথা হয়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই শহীদ সাহেবকে তিনি নিয়মিত চিঠি লিখতেন।
১৯৩৯ সালে কলকাতায় বেড়াতে গেলে তাদের আবার দেখা হয়। সেখান থেকে ফিরে এসে গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেন এবং তিনি সম্পাদক নির্বাচিত হন। এভাবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৪১ সালের পর পুরোপুরিভাবে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতি করতে গিয়ে পরিবার কর্তৃক কখনো বাধাপ্রাপ্ত হন নাই বরং সবসময়ই অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিলেন; যা বোঝা যায় তার পিতার এ উক্তিটির মাধ্যমে —’ বাবা রাজনীতি করো আপত্তি করব না, পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করছ এতো সুখের কথা, তবে লেখাপড়া করতেও ভুলিও না। লেখাপড়া না শিখলে মানুষ হতে পারবা না। আরেকটা কথা মনে রেখো Sincerity of purpose and honesty of purpose থাকলে জীবনে পরাজিত হবে না।’তাছাড়া তার স্ত্রীও পাশে থেকে সবসময় সাহস যুগিয়েছেন। প্রথমদিকে বাবার কাছ থেকে টাকা এনে রাজনৈতিক কাজে খরচ করতেন পরবর্তীতে স্ত্রী রেণু সংসারের খরচ বাঁচিয়ে তাঁর জন্য টাকা জমিয়ে রাখতেন।
রাজনীতির সাথে জড়ানোর পর থেকে সব ধরনের জাতীয় ও গণতান্ত্রিক এবং ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।আলোচ্য গ্রন্থে এর কালক্রমিক বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন তেতাল্লিশ এর দুর্ভিক্ষের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছি। তিনি তখন পুরোপুরি মাঠ পর্যায়ের কর্মী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শহীদ সাহেবের সহায়তায় বিভিন্ন জায়গায় লঙ্গরখানা খুলেন। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে দুর্ভিক্ষ এবং তারপর বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা প্রশমনে শেখ মুজিবের সক্রিয় ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।বিশেষত’ ৪৬ এর কলকাতার দাঙ্গার বিবরণ বেশ বিস্তৃতভাবে এসেছে এই বইয়ে। সে সময় দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনি দিনরাত কাজ করে গেছেন।
দেশবিভাগের পরপরই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারলেন— স্বাধীন দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তা অধরাই থেকে যাচ্ছে। দেশ বিভাগের পর তার রাজনীতির গুরু শহীদ সাহেব পশ্চিমবাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে সেখানেই থেকে গেলেন। এদিকে নাজিমুদ্দিন নেতা নির্বাচিত হয়ে ঢাকা চলে এলেন। শুরু হল মুসলিম লীগের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির খেলা। এসময় তিনি তার অবস্থান থেকে সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন, কথা বলেছেন নিপীড়িত মানুষের পক্ষে।সে সব বর্ণনা অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে এই বইয়ে উঠে এসেছে।শুধু তাই নয় কলকাতা সিলেট নিয়ে ব্রিটিশদের রাজনীতির বিবরণ পাওয়া যায়।
এছাড়া যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের কথা, আদমজী জুট মিলের দাঙ্গার কথা তিনি অভিজ্ঞতার আলোকে বর্ণনা করেছেন। রাজনৈতিক কুটচাল, পার্টি ম্যানুপুলেশন, টাকার খেলা, দল বদলানো, মানুষের নতুন চেহারা উন্মোচন, সবই পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে। যুক্তফ্রন্ট হবার পর থেকে আরও নানাবিধ কিছু গন্ডগোল ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ভেতর দিয়ে কাহিনী প্রবাহ আগাতে গিয়ে হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যায়। অসমাপ্ত এ লেখা আর শেষ করা হয় না। পুরো বইয়ে তিন-চারবার বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন স্থানের ভ্রমণের বিবরণ এসেছে। ভ্রমণকাহিনী গুলোর খুঁটিনাটি সব গুছিয়ে লেখা। যেমন ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীনের শান্তি সম্মেলনে যোগদান এবং পুরো চীন ভ্রমনের কাহিনী খুব সুন্দর ভাবে বর্ণিত হয়েছে। চীনের সমাজতন্ত্রের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে।আজমিরে মাজার জিয়ারত, দিল্লি ভ্রমণ ও আগ্রার তাজমহল ভ্রমণের বর্ণনা আছে আত্মজীবনীতে।
নিজস্ব মূল্যায়ন/মন্তব্য:
রাজনীতির কবি হিসেবে খ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখের ভাষার মতোই বইটির ভাষারীতি অন্তত সহজ সুন্দর ও সাবলীল। বইয়ের শব্দ আর বাক্যের ব্যবহারে পাণ্ডিত্য কিংবা উপমা,রূপকের ব্যবহারে চমৎকারিত্ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা নাই, নাই জ্ঞানগর্ভমূলক বা কোন উপদেশবাণী দেওয়ার চেষ্টা। তবুও মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে হয়। অন্তত সহজ ও নির্লিপ্ত ভাষায় পুরো ঘটনাপ্রবাহ তিনি লিখে গেছেন। কিছু জায়গায় ঘটনার প্রয়োজনে কিছু আবেগ তাড়িত কথাবার্তা এসেছে। কিন্তু সেটার পরিমাণ খুব বেশি নয়। এছাড়াও আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু শিল্প, সাহিত্য, কবিতা, সৌন্দর্যবোধ ও সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগ এর পরিচয় পাওয়া যায়। 

ই হচ্ছে মানুষের সেই বন্ধু যে কখনো ক্ষতি করে না।বই-ই হচ্ছে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ । যার সাথে পার্থিব কোনো সম্পদের তুলনা হতে পারে না । একদিন হয়তো পার্থিব সব সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাবে , কিন্তু একটি ভালো বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান কখনও নিঃশেষ হবে না , তা চিরকাল হৃদয়ে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখবে । আরবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির আবেদন বহুমাত্রিক। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটিতে ১৯৩৮ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত উপমহাদেশের বিশেষত পূর্ব বাংলার সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনবদ্য দলিল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দেয়া ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পূর্বে বাঙ্গালি জাতীয়তাবোধের চেতনা কোথায় এবং কখন থেকে উন্মেষ হয়েছিল তা জানার জন্য হলেও অসমাপ্ত আত্মজীবনীটি পাঠোদ্ধার করা জরুরী। এছাড়াও বিসিএস ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী আপনাকে পড়তেই হবে।
ব্যক্তিগত রেটিং : ১০/১০
বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনী pdf free download