চতুর্থ /৪র্থ শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় গাইড PDF
Coming Soon
চতুর্থ /৪র্থ শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা গাইড PDF
Coming Soon
আরও পড়ুনঃ-
বইয়ের নাম : স্কুটি
লেখক : রাকিব আল হাসান
প্রকাশনায় : বর্ষাদুপুর
প্রচ্ছদ : সাজু
পৃষ্টা সংখ্যা : ৮৮
জীবন মানেই ছোটো বড় কতগুলো গল্পের সমষ্টি। ছোটো বড় সেই গল্প গুলো মিলেই গড়ে উঠে একটা জীবন। সূর্যোদয় থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে সেই জীবনের একেকটা দিনলীপি৷ এভাবে জীবনে যোগ হয় নতুন নতুন দিন, নতুন নতুন ঘন্টা আর নতুন নতুন কিছু মুহুর্ত। এই সব মুহুর্ত গুলোর প্রাপ্তি হয়ে থাকে কিছু স্মৃতি। আর সেই স্মৃতি গুলোর পেছনে ছায়ার মতোই দাড়িয়ে থাকে কিছু গল্প। এভাবেই গল্পের সমষ্টিতে গড়ে উঠে জীবন। কখনো কখনো জীবনের গল্প গুলো এতোটাই বিস্তর হয়ে উঠে যে, সেই গল্প গুলো জীবনের চেয়েও বড় হয়ে যায়। স্কুটি উপন্যাসটাও এমনই। বিশাল দুনিয়ায় মাঝে ডানা মেলে স্কুটির চাকার মত চলতে থাকে একেকটা জীবন। অথচ সমস্ত দুনিয়া জুড়ে কেবল তার ই গল্প৷
উপন্যাসের শুরুটা টিনা নামক এক স্কুটারের বেদনার গল্প দিয়ে। স্কুটির চাকা চলে ত তার জীবন চলে! পৃথিবীর চিরায়ত সত্য, আনন্দ আর বেদনা একই পথে হাটে। শান্তি সাগর মোড়ে একত্রিত হওয়া একজোড়া জীবনকে নিয়ে এই উপন্যাসের উপখ্যান। রাতুল আর টিনা। দুইজন দুরকমের মানুষ হলেও দুজনের জীবন একই সূত্রে গাঁথা। রাতুল ভ্রাম্যমাণ স্কুটার আর টিনা প্রোফেশনাল, যার জীবনটাই নির্ভর স্কুটির দুই চাকার উপর!
এক কাপ চায়ে কথা জমে ওদের। ব্যাস্ততম জীবনে শত গল্পের জন্ম হয় ওদের স্কুটিতে। জীবন কখনো অর্থহীন, কখনো রঙিন। কখনো ডানা মেলে উড়তে চাইবে, কখনো অন্ধকারে হারাবে একা একা। বকুল গাছের নিচে তীব্র ঝড়ের মুখোমুখি হয়ে টিনাও অন্ধকার দেখতে শুরু করে।কিছুক্ষণ আগে স্কুটিটা নিয়ে গেল দুর্বৃত্তের দল। পুলিশের কাছে গিয়ে যখন ব্যর্থ হয়, তখনি অন্ধকার ঘনিয়ে আসে টিনার জীবনে। ঠিক তখনি আলো দেখায় রাতুল, টিনার মতোই জীবনকে যে একটা যুদ্ধক্ষেত্র ভাবে। তার যুদ্ধটা স্ত্রী শাওনের জীবন বাঁচানোর তাগিদে। যে ভাবে স্কুটির চাকায় জমে থাকা গল্প তার মতোই অসংখ্য মানুষের। দুর্বৃত্তদের হাত থেকে টিনার স্কুটি উদ্ধার করে আনে সে। কৃতজ্ঞতায় নত হয় টিনা। এখান থেকে তাদের জীবনের গল্প শুরু, যে গল্প শেষ পর্যন্ত জীবনকে ছাড়িয়ে গেছে হয়ে গেছে জীবনের চেয়ে বড়!
স্বামীকে হারিয়ে একমাত্র মেয়ে চন্দ্রমুখী আর স্কুটির দুই চাকাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে শেখে টিনা। তার জীবন স্কুটির দু’চাকার উপর নির্ভর। বেঁচে থাকার তাগিদে টিনা স্কুটি চালালেও, রাতুলের গল্পটা ভিন্ন। ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রী শাওনের ঔষধের খরচ যোগাতে চাকরি শেষে এই নগরীর বুকে নেমে পড়ে সে স্কুটি নিয়ে। স্কুটির গল্পে ভিন্নতা থাকলেও জীবনের গল্প একই মোহনায় দাঁড় করায় দুইজনকে, যেমনভাবে স্কুটির দুই চাকা চলে পথে প্রান্তরে সমান্তরালে। স্ত্রীকে ভালবাসে রাতুল। ক্যান্সার তাদের অন্তর আত্নাকে যেন আরো কাছাকাছি এনেছে। সে চায়, কাছে থাকুক স্ত্রী। নইলে তার ঘরে ফেরার তাড়া থাকবে না। ভালবাসা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। আটপৌরে জীবনযাপন করা রাতুল লটারির টিকিট কিনে। লাইনে দাঁড়ানো সকলে যেখানে দশ টাকার লটারি কয়েকটা করে কিনছে, সে একটাই নিয়েছে। পঁচিশ লক্ষ টাকা প্রথম পুরস্কার। স্ত্রীকে আরো ক’টাদিন ভালবেসে যেতে এই টাকাটা যথেষ্ট। যক্ষের ধনের মতোন লুকিয়ে রাখে লটারিটা। একদিন সিন্দুক থেকে লটারি বের করে, তার আগে প্রিয়তমা শাওন চলে যায় না ফেরার দেশে।
এদিকে রাতুল আর টিনা একে অপরের বন্ধু হয়ে ওঠে, দুজন দুজনের সুখ-দুঃখে এগিয়ে আসে। এভাবে চলতে থাকে জীবনের গল্প। ২৫ লক্ষ টাকার লটারির ড্র হয়েছে, রাতুল সে সারপ্রাইজটা টিনা আর চন্দ্রমুখীকে দেবার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে । দুজনে স্কুটি নিয়ে অজানায় হারাতে চায়। দুটিমন এক মনে হতে চায়। সমাজ তা হতে দেয় না। সমাজের চোখে বিধবার পরপুরুষের সঙ্গ নেওয়া ঘোর অনর্থ। অথচ সমাজ ভুলে যায়, জীবন সবকিছুর ঊর্ধ্বে। শান্তি সাগর মোড়ে বেঁচে থাকার সহস্র আয়োজন চোখে পড়ে। এখানে প্রতিটি মানুষ নিরাপদ। নিরাপদ তাদের প্রিয়জনরা। নিরাপদ তাদের পথচলা। নিরাপত্তাকে সঙ্গী করে টিনার স্কুটি চষে বেড়ায় শহরের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত। স্কুটির চাকায়, যাত্রীর কথায় উঠে আসে অনেক গল্প, যেগুলো জমে ছিল মনের গহীনে। গল্পে গল্পে সারাক্ষণ ডুবে থাকলেও রাতুল আর টিনা একে অপরের অপেক্ষায় থাকে। দুটি মন এক হতে চায়, হতে চায় একে অপরের প্রিয়জন। প্রিয়জন হয়ে ওঠার আগে রাতুল এবং টিনা একে অপরের কাছে প্রয়োজন ছিল। ডুবতে বসা সূর্যের মলিনতায় নয়, একে অপরকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল ভোরের স্নিগ্ধ আভার মতো। সময়ের পালাক্রমে প্রয়োজন থেকে প্রিয়জনে রূপান্তর।
অন্ধকারে থেকে যায় তাদের ভাবনা। থেমে যায় জীবনের গতি। কি হয়েছে তারপর? জানতে হলে পড়তে হবে স্কুটি।
সুতা মোড়ানো বইয়ের কালো বর্ণের মাধ্যমে লেখক পাঠকের হৃদয়কে আবেগের আরশে মাতিয়ে তোলার যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বইটির প্রতিটি পাতা, প্রতিটি প্যারায় রয়েছে চিন্তার খোরাক, কখনো হতাশা কখনোবা হাসি। প্রতিটি পাতায় রয়েছে, চাকায় পিষ্ট হওয়া জীবনের নিখাদ গল্প আর অভিনব চমক। প্রেম, ভালোবাসা, রহস্য আর রোমাঞ্চের সমস্ত উপাদান লেখক তার হৃদয় উজাড় করে দিয়ে ব্যাখ্যা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা সম্পর্কের সমীকরণ, নিয়তির যাঁতাকলে পিষ্ট হবার নির্মম বাস্তবতা, হিংসা, বিদ্বেষ আর ভালোবাসার এক বাস্তব উপাখ্যান এই স্কুটি।
স্কুটির চাকায় লেখক এক জীবনের গল্প দিয়ে বর্ণনা করছেন শহরের অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানো সংগ্রামী শত নারীদের গল্প। পুরো উপন্যাস জুড়ে কিছু বানান ভুল ছিলো তবে তা যৎসামান্য। আশাকরি, পরবর্তী লেখক সেদিকে মনযোগ দিবেন।
শুভ কামনা, স্কুটির স্রষ্টা রাকিব আল হাসানের জন্য। পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে স্কুটি পোঁছে যাক গন্তব্য।
প্রিয় পাঠক, স্কুটির চাকায় নিজের জীবনের গল্প জানতে চাইলে পড়তে পারেন বইটি, পড়তে গিয়ে কখনো মনে হতে পারে এত আমার জীবনের গল্পই বলে যাচ্ছে লেখক। লেখকের স্কুটিতে চড়ে আপনিও উপভোগ করুন ভাবনার গল্প, সম্পর্ক ও সংকটের গল্প, নিয়তি কিংবা বাস্তবতার গল্প, পিছুটান বা হাহাকারের গল্প। আশাকরি হতাশ হবেননা। কিছুটা হলেও প্রাণ জুড়াতে পারবেন।
lecture publication guide for class 4 এর pdf গুলো ebook করতে কোনো সমস্যা হলে জানাবেন।