Good Parenting Bangla books Pdf Download & Review
বই: গুড প্যারেন্টিং,সন্তান প্রতিপালনে সফল হওয়ার উপায়.
লেখক: নেসার আতিক।
প্রকাশনা: গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স।
দাম: ২৫০ টাকা।(HC)
পৃষ্ঠা: ১৪৮ পেজ
গুড প্যারেন্টিং বই রিভিউ:
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা।আর স্থায়ী সৎকাজ তোমার রবের নিকট প্রতিদানে শ্রেয় এবং প্রত্যাশাতেও উত্তম।”{সূরা আল কাহফ-৪৬}
রাসূল (সঃ)বলেছেন-
“যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তার আমল তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কেবল তিনটি বিষয় ছাড়া-অবিরত সদকা,উপকারী জ্ঞান,এবং সৎকর্মশীল সন্তান যারা তার জন্য দোয়া করে।”{মুসলিম-১৬৩১}
লেখক পরিচিতি:
নেসার আতিক।জন্মসাল-১৯৭১.তার ব্যাংকিং পেশার বাইরে তিনি একজন মননশীল প্যারেন্টিং চিন্তক ও কথক।প্যারেন্টিং বিষয়ে এযাবৎ শতাধিক উন্মুক্ত উপস্থাপনায় অংশ নিয়েছেন।
ভূমিকা:
আপনি যে পেশায় কাজ করেন,সেখানে আপনার জ্ঞান,দক্ষতা,অভিজ্ঞতা,সব উজাড় করে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করেন,যেন আপনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন।প্যারন্টিং তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব-কর্তব্য।আপনি একজন বাবা-মা হিসেবেই নয়;বরং একজন সম্মানিত মানুষের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।
“আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছি”{সূরা বনি ইসরাইল-৭০}
মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি।একজন সম্মানিত প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জানাশোনা থাকবে না,প্রস্তুতি থাকবে না-এটা হতে পারেনা।কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে তা খুবই সীমিত।
তাই গুড প্যারেন্টিং শেখার অন্যতম সহায়ক হতে পারে লেখক নেসার আতিকের কাগুজে সন্তান “গুড প্যারেন্টিং,সন্তান প্রতিপালনে সফল হওয়ার উপায়”
সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিচিতি:
A science requires methodologies,structures,strategies, and assumptions.An art requires wisdom,tact,intuition,love,and commonsense,Child rearing is a science,an art,and a spiritual endeavor.
সত্যিই সন্তান প্রতিপালন একটা আর্ট,একটা আবিষ্কার।চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে এই আর্ট বা আবিস্কারকে আরো সুন্দর করা যায়।
বইটি মোট তেরোটি অধ্যায়ে বিভক্ত।
[১]প্যারেন্টিং ভাবনা→
পৃথিবীর সব বাবা-মা ই তাদের সন্তানকে ‘আকাঙ্ক্ষার ধন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান।
কিন্তু মুশকিল হলো আমাদের সমাজের বড়ো হওয়া বা দশে এক হওয়ার সব আয়োজনই ভালো রেজাল্ট এবং চাকরিকেন্দ্রিক।জ্ঞানী ও অাদর্শ মানুষ হওয়া মূখ্য নয়।
কিন্তু আসলেই কী আমাদের জাগতিক সফলতাই কি সফলতা?অবশ্যই না।
একজন সচেতন মা-বাবা অবশ্যই তার সন্তান কে প্রকৃত মানুষ হিসেবেই গড়ে তুলতে চাইবেন।কিভাবে একজন বাবা-মা তার সন্তান প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আদর্শ বাবা-মায়ের ভাবনা কেমন হওয়া দরকার তার বিবরণ দেয়া হয়েছে এই অধ্যায়ে।
[২]প্যারেন্টিং:বাস্তবতা→
সন্তান শুধু একটা গন্ডিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচে না।সে একটু একটু করে বড়ো হয় এবং একটু একটু করে পৃথিবীকে চিনতে শুরু করে।পৃথিবীর নানাবিধ মানুষ,নানারকম সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে শুরু করে।
তাই সে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে শুরু করে।
পরিবার কেন্দ্রিক বা পরিবারের বাইরের সব সমস্যাগুলো একজন আদর্শ বাবা-মার বাড়তি সতর্কতায় সমাধান হতে পারে।
এই অধ্যায়ে লেখক বাবা-মায়ের সন্তানের প্রতি বয়স এবং পরিবেশ অনুযায়ী কেমন আচরণ করা উচিৎ তার বর্ণনা দিয়েছেন।
[৩]শিশুর বিকাশে দক্ষতা পিরামিড→
এই অধ্যায়কে আমার বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় মনে হয়েছে।
আমাদের দক্ষতাগুলো সত্যি একটা পিরামিডের মতো।এর গোড়ায় থাকে নৈতিক দক্ষতা যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।দ্বিতীয় পর্যায়ে,শিক্ষাগত উৎকর্ষতা।তৃতীয় পর্যায়ে,ভাষাগত দক্ষতা।চতুর্থ পর্যায়ে,বিশ্লেষণ দক্ষতা এবং সবশেষে সামাজিক দক্ষতা।সত্যিই আমাদের এই দক্ষতাগুলো অর্জন করাটা খুব দরকার।নিজের জন্যও এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও।বলা হয়ে থাকে বাবা-মাকে অন্তত সন্তানের জন্য হলেও উত্তম হওয়া দরকার।
প্রশ্ন হলো কিভাবে এ দক্ষতা অর্জন করোবো?উত্তর জানতে পড়ে ফেলুন বইটা।
[৪]দক্ষতার নানা দিক:শিক্ষা,ভাষা,বিশ্লেষণ→
আচ্ছা শিক্ষা মানে কী?পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট বা ভালো চাকরি?না-কি জ্ঞান অর্জন?
কিন্তু আমাদের সমাজে শিক্ষার মানটা ভালো রেজাল্ট এবং ভালো চাকরিতেই আটকে আছে।
তাইতো অনেক পড়াশোনা করেও আমাদের নৈতিকতার উন্নতি হচ্ছে না।আমরা সত্যিকারের জ্ঞান অর্জন করতে পারছি না।
অাবার অনেকে বড়ো একটা ডিগ্রি নিয়েও এক লাইন শুদ্ধ ইংরেজি বা আরবি বলতে পারেনা।
আমাদের বিশ্লেষণ শক্তি শূন্যের কোঠায়।
বোরিং পড়াশোনাকে আনন্দময় করতে,একজন শিশুকে তার শিশু বয়স থেকে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য বুঝানোটা কিন্তু বাবা-মায়েরই দায়িত্ব।কিভাবে?……
[৫]সামাজিক দক্ষতা→
‘প্রত্যেক নরম দিল,ভদ্র এবং মানুষের সাথে মিশুক লোকদের জন্য জাহান্নাম হারাম'{আহমদ-১/৪১৫}
রাসূল (সঃ)যদিও আমাদের কে বলেছেন নরম দিল,ভদ্র মানুষ হতে।
কিন্তু বর্তমানে পত্রিকা খুললেই দেখা যায়,এক কিশোরের হাতে আরেক কিশোর খুন।তুচ্ছ কারণে মারামারি,খুনোখুনি হওয়া এখন ডাল-ভাত।
এর কারণ কী?
কারণ তারা অপরের দুঃখে দুঃখিত হতে শেখেনি।
[৬]সন্তান পালনে পারিবারিক প্রস্তুতি→
উত্তম গুণাবলী বাবা-মা পাওয়া সন্তানের অধিকার।উত্তম সন্তান পাওয়ার জন্য সর্বপ্রথম বাবা-মাকেই উত্তম আদর্শের অধিকারী হতে হবে।
শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে বিভিন্ন স্টেপে উন্নতি হয়।আর বিভিন্ন স্টেপে তাই সে নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয়।
তাদের এ সমস্যাগুলো কৌশলে দক্ষতার সাথে যদি বাব-মা সমাধান করতে পারেন এবং তাদের পাশে দাড়াতে পারেন তাহলেই সমাজ একটি আদর্শ সন্তান পাবেন।
[৭]প্যারেন্টিং আচরণ→
সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের আচরণিক কৌশল বিশ্লেষণ করলে চার ধরনের প্যারেন্টিং আচরণ লক্ষ করা যায়:
আবেগপ্রবণ প্যারেন্টিং।
স্বাভাবিক প্যারেন্টিং।
কৌশলগত প্যারেন্টিং।
অাগ্রাসী প্যারেন্টিং।
আবেগপ্রবণ প্যারেন্টিং এবং অাগ্রাসী প্যারেন্টিং দুটোই সন্তানের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ।
স্বাভাবিক প্যারেন্টিং এবং কৌশলগত প্যারেন্টিং ই একজন শিশু কে সুন্দর এবং আনন্দঘন জীবন উপহার দিতে পারে।
স্বাভাবিক এবং কৌশলগত প্যারেন্টিং আচরণ করার অভ্যাস কিভাবে আমরা অর্জন করবো লেখক তার বিবরণ দিয়েছেন এই অধ্যায়ে।
[৮]সন্তানদের বেড়ে উঠায় পারিবারিক বন্ধন→
শিশুর প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো পরিবার।শিশু তাই শিখে যা সে তার পরিবারে পায়।
একজন শিশুকে আদর্শবান বানানোর জন্য সর্বপ্রথম তার পরিবারটাকেই আদর্শস্থান বানানো জরুরী।
তবে অবশ্যই তা নিজে নিজে আদর্শস্থান হবে না,তার জন্য চাই সঠিক জ্ঞান।
[৯]সন্তান প্রতিপালনে পারিপার্শ্বিক প্রভাব→
বহুমাত্রিক সমাজে সন্তান বেড়ে উঠায় পারিপার্শ্বিক প্রভাব থাকে।সব প্রভাবই কিন্তু ইতিবাচক নয়।
তাহলে নেতিবাচক প্রভাব থেকে সন্তানদের বাঁচানোর উপায় কী?
এই উত্তর নিয়েই সাজানো হয়েছে এ অধ্যায়টি।
[১০]সন্তান পালন সাধনার বিষয়ে→
প্রথমেই বলা হয়েছে-Child rearing is a science,an art.একজন সাইনটিস্ট তার আবিস্কারকে নিবৃত্ত মনে নিখুঁত চিন্তা শক্তি দিয়েই সাজায়।একটা আর্টে যদি সাধনা না থাকে তাহলে তা জীবন্ত হয় না।
সন্তান পালন ও তেমনই সাধনার বিষয়।আপনি যতোটা মনোযোগ দিয়ে আপনার সন্তানের সাইকোলজিক্যাল ট্রমাগুলো খেয়াল করবেন এবং সে অনুযায়ী তাকে হ্যান্ডেল করতে পারবেন আপনার শিশু ততোটাই প্রানবন্ত এবং আদর্শিক হবে।
[১১]আলোকিত প্যারেন্টিং→
বাবা-মা সন্তানের কাছে পরিবারের মধ্যমণি।সন্তানের কাছে অনুকরণীয়।কিন্তু এক গবেষণায় দেখা যায়-৯৫ ভাগ সন্তানই বাবা-মাকে তাদের অনুকরণীয় আদর্শ মনে করেনা।এই রেজাল্ট অবশ্যই সুখকর নয়।
সন্তানকে গড়তে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে গড়তে হবে।
[১২]প্যারেন্টিং:স্বপ্নের সুরক্ষা→
সমাজে নিরাপত্তা বোধের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে।বিরাজমান বাস্তবতায় সন্তানের সুরক্ষায় তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে হবে।
শারীরিক নিরাপত্তা,
মানষিক নিরাপত্তা,
আধ্যাত্বিক নিরাপত্তা।
এই বেষ্টনীকে শক্তিশালী করার কৌশল নিয়েই এই অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এ অধ্যায়ের আকর্ষণীয় মডেলের নাম হচ্ছে SAD মডেল।অর্থাৎ সবর(S),আ’মল(A),দুআ (D).
[১৩]প্যারেন্টিং:নিজের আয়নায় আমি→
মা/বাবা ডাকটা যেমন সুখকর তেমনই এটা অনেক বড়ো দায়িত্ব ও বটে।
আমি নিজে সে দায়িত্ব নেয়ার যোগ্য হয়ে উঠেছি কি-না তা পরীক্ষার জন্যই এই আয়না।
পাঠ উপলব্ধি:
আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সাবজেক্ট কোনটা?আমি নির্দ্বিধায় বলবো প্যারেন্টিং।অথচ আমাদের সমাজে এই সাবজেক্টই শিখার কোন ব্যবস্থাই নাই।
বাবা/মা শুধু মুধুময় দু’টো ডাকই নয়,বরং ভিষণ দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়ার মতো দু’টো ডাক।আজকের সমাজের দিকে তাকালেই তা সহজে বুঝা যায়।
নিত্যদিন আমাদের চোখের সামনে ভেষে আসা নিউজের অপরাধীরা কিন্তু কোন বিচ্ছিন্ন মানুষ নয়।তারা একেকজন একেকটা পরিবার থেকে উঠে আসা সন্তান।তাদের এই অপরাধের দায়বদ্ধতা থেকে কী কোনভাবে বাবা/মা রেহাই পাবে?পরকাল বা দুনিয়া?
হে বিশ্বাসীগন:তোমরা নিজেদের এবং পরিবারের সদস্যদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।{সূরা আত-তাহরিম:০৬}
তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের অধীনস্থ ব্যক্তি ও সম্পদের দায়িত্বশীল।এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।{বুখারী:৫১৮৮.মুসলিম:৪৮২৮}
এই আয়াত এবং হাদিস আমাদেরকে আমাদের দায়িত্বের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
লেখক আলহামদুলিল্লাহ অসাধারণ ভাবে একজন আদর্শিক মা এবং একজন আদর্শিক বাবা হওয়ার পাঠটা এখানে বুঝিয়ে দিয়েছেন।উপলব্ধি করিয়েছেন শুধু বাবা/মা হওয়াটাই বড়ো কথা নয় সবচেয়ে বড়ো কথা হলো সন্তানকে সঠিক ভাবে লালনপালন করা।
আপনার সন্তান আপনার শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
বাংলাদেশে প্যারেন্টিং সম্পর্কে আরো বিস্তর আলোচনা হোক।লিখালিখি হোক।
এবং আপনার গুড প্যারেন্টিং শিখার শুরুটা হোক এই বই থেকেই।
আল্লাহ লেখককে উত্তম জাযা দান করুন।প্যারেন্টিং সম্পর্কিত আরো অনেক অনেক বই লিখার তাওফিক দান করুন।