Biye book pdf Download & Review
বইয়ের নামঃ বিয়ে
লেখকঃ রেহনুমা বিনতে আনিস
প্রকাশনীঃ গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
মূল্যঃ ১৭৫টাকা
বিয়ে বুক রিভিউ:
কারাে বিয়ের খবর শুনলেই প্রথমে প্রশ্ন জাগে, ‘কনে দেখতে কেমন?’ কিংবা ‘বর কি করে?
অথচ বৈজ্ঞানিক-অবৈজ্ঞানিক সমস্ত জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, বৈবাহিক জীবনে সুখের ক্ষেত্রে সৌন্দর্যের ভূমিকা বড়জোর ছ’মাস থেকে একবছর। আর অনেক ধনী মানুষ মুহূর্তে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন এমন উদাহারণও আছে। অথচ ক্ষণস্থায়ী এই দুটো গুণ কিভাবে বিয়ের মতাে একটা চিরস্থায়ী বন্ধনের মূল
ক্রাইটেরিয়া হয়? যেখানে ছেলের চরিত্র, মেয়ের চরিত্র উপেক্ষা করে বাহ্যিক গুণগুলাে প্রাধান্য লাভ করে এমন একটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে সম্পর্ক সম্পর্কে বলা হয়েছে।
“পােশাকস্বরূপ।’ এমন অনেক সুন্দরী বউ আছে যার চাহিদা পূরণের জন্য স্বামীকে ঘুষ খেতে হয়। আর এমন অনেক দাড়ি-টুপিওয়ালা স্বামীও আছেন যারা সুন্দরী স্ত্রীকে প্রদর্শনীর সামগ্রীতে পরিণত করে রাখেন। এটিকে
কি ভালােবাসা বা পারিবারিক সম্প্রীতি বলা যায়? অথচ অনেক দরিদ্র পরিবারেও দেখা যায়, বড় মাছ এনে স্বামী- স্ত্রী মিলে গল্প করতে করতে কাটান, সেখানে ‘প্রেমের উৎসব’ বয়ে যায়। কনের পিতা কন্যার বিয়ের দিন সবকিছু উজার করে কন্যাকে দিতে চান। সব ভালােবাসা যে বিয়ের দিনই দিয়ে দিতে হবে এমন তাে কোনাে কথা নাই । আর যে বরপক্ষ বিয়ের আগেই যৌতুক তথা ‘উপহার সামগ্রী’ চেয়ে কনের পিতাকে হেনস্তা করে ফেলে, বিয়ের পর সেই ঘরে মেয়ে কতােটাই বা সুখী হতে পারবে? এইসব প্রশ্নের উত্তর কনের বাবাকে মেয়ে বিয়ে দেবার আগেই হিসেবে মিলাতে হবে, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়তে পারে কিন্ত কন্যাকে একবার বিয়ে দিলে সেই চোর পালানাের পর বুদ্ধি আর কোনাে কাজে আসবেনা । বিয়ের পর আমাদের দেশে একটা প্রচলিত অভ্যাস দেখা যায় স্ত্রীর নামের শেষে স্বামীর নাম জুড়ে দেওয়া কিংবা স্ত্রীর নামের আগে মিসেস বলে স্বামীর নাম লাগানাে (যেমন :মিসেস রহমান) । অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে ভালাে স্বামী হিসেবে পরিচিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিসালাম এর স্ত্রীদের নামের সাথে কি এমন বলা হয় মিসেস আয়েশা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিসালাম ? বরং তাঁর নাম বিয়ের আগে পরে আয়েশা বিনতে আবু বকরই ছিলাে । স্বামীর সাথে সম্পর্ক একটা শব্দ তিনবার উচ্চারণ করলে পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্তু বাবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়না। এই অনুচ্ছেদটি লেখিকা অনেক সুন্দর একটা শিরােনামে লিখেছেন, ‘অনেক কিছু আসে যায়। বইটির মােট অনুচ্ছেদ ২২ টি। প্রথম ৮ টি অনুচ্ছেদ লেখিকার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে। পরের ১৪ টি অনুচ্ছেদ বিয়ে নিয়ে কয়েকটি সুন্দর গল্প নিয়ে। অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখা অনুচ্ছেদগুলাের শিরােনামও চিত্তাকর্ষক।
বইটি পড়ে অখাদ্য-কুখাদ্য কিছুই পেলাম না; বরং
ইসলামিক সাহিত্য চর্চার জন্য বইটি গ্রহণযােগ্যতা
অবশ্যই অত্যধিক। বইটির ঘটনাগুলাে পড়ে আপনি
বিবাহের মাধ্যমে সৃষ্ট আত্মীয়ের সম্পর্কগুলাে কেমন হয় তা জানতে পারবেন। বিয়ের জন্য যারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন, তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একবার হলেও বইটি পড়া প্রয়ােজন। আপনি যদি একজন মা, স্ত্রী কিংবা বাবা, স্বামী হয়ে থাকেন তবে আপনিও বইটি পড়বেন। বুঝতে পারবেন, আপনার বৌমা কতটা মানুসিক চাপের মধ্যে থাকে। তার উপর এমন অসহনীয় আচরণ করা আদৌ উচিত কি না? .
এ বইটিতে তিনি বিয়ের গুরুত্ব এবং বিয়ে প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।সাধারন দিক বিবেচনা করে বইটি নারীদের জন্যে তুলনামূলক বেশী গুরুত্বপূর্ন বলে আমার মনে হয়েছে। আমাদের দেশে বিয়েতে মেয়েদের মতামত কিংবা বিয়ে সম্পর্কে ধারন খুবই সীমিত। লেখিকা এই দিকটি বিশেষ ভাবে আলােকপাক করার চেষ্টা করেছেন। ছােট ছােট গল্পের মাধ্যেমে বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান তুলে ধরেছেন।
শেষের দিকে গল্পগুলাে স্রেফ গল্প নয়, আমাদের সমাজের বাস্তবতা। কখনাে বউ-শ্বাশুড়ির দা- কুমড়াে সম্পর্ক। কখনাে আবার বউ-শ্বাশুড়ির মিষ্টি সম্পর্ক, বউমাকে নিজের মেয়ের মতাে আগলিয়ে রাখার সম্পর্ক। আবার কখনাে স্বামীর পরকীয়ার সম্পর্ক নিয়ে লেখিকা এখানে স্ত্রীর ভূমিকা কি হওয়া উচিত ছিলাে সেটাও গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। কিছু বই আছে যেগুলাে বিপ্লব আনতে পারে । বিয়ে বইটাও আশা করি বিপ্লব আনবে । বিয়ে নিয়ে সমাজের কুসংস্কারগুলাে দূর
হবে, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া স্বত্তেও ছেলেদেরকে বিয়ে দিতে বাবা-মা দ্বিমত করবেনা, পাত্র-পাত্রী নির্বাচনেও বস্তুকেন্দ্রীক মনােভাবের পরিবর্তন আসবে।
বইটির প্রতিটি গল্পের ইন্ডিংগুলাে ছিল অনেক ক্ষেত্রে মিলনাত্মক এবং প্রশান্তিদায়ক। আমার কাছে এই বইটির ‘অনেক ভালাে লেগেছে’ এমন গল্প হলাে- ‘হঠাৎ বিয়ে, “একজন বেহেস্তি নারী” আর সবার শেষের গল্প “অন্ত পথের সাথি” গল্পটি। আরও অনেক আছে। যেগুলাে মিলেই; ঘটনাপ্রবাহ ভালাে লেগেছে বলে সাথে সাথে ভালােলাগা সৃষ্টি হয়েছে বইটির প্রতি। ভালাে লাগার মতােই একটি বই এটি। সর্বোপরি সমাজের মধ্যে বিয়ে প্রথা যেরকম হওয়া উচিত সেরকম হওয়ার পথে বইটা পাথেয় হতে পারে এই আশা করি।