বেগ বাস্টার্ড সিরিজ Pdf Download (৫টি একত্রে)
এখানে আপনারা বেগ বাস্টার্ড সিরিজ pdf download করতে পারবেন সম্পুর্ণটা | Beg Bastard Series Pdf Download all hooks here। ৫টি একত্রে একসাথে দেয়া হয়েছে আপনাদের ডাউনলোডের সুবিধার্থে। তো এক পলকে দেখে নিন কি কি বই থাকছে।
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এর বেগ বাস্টার্ড সিরিজের ৫টি বই রয়েছে। যথাঃ
- নেমেসিস
- কন্ট্রাক্ট
- নেক্সাস
- কনফেশন
- করাচি
বেগ বাস্টার্ড সিরিজ Pdf Download | Beg Bastard Series Pdf Download
- nemesis nazimuddin pdf download link- Click here – link02 – link 03
2. Contract by Nazim Uddin pdf download link- Click here
3. Karachi by Nazim Uddin PDF download link- Click here
4. Nexus by nazim uddin pdf download link- Click here
5. koraci by nazim uddin pdf download link- Click here
অন্ধকার ঘরের চারপাশটা তার কাছে একটু একটু করে উদ্ভাসিত হতে লাগলাে। ঠিক কতােক্ষণ আগে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বুঝতে পারছেন না।
আজকাল গাঢ় ঘুম হয় না বললেই চলে। শরীর যখন সচল ছিলাে কোনােরকম প্রচেষ্টা ছাড়াই ঘুমিয়ে পড়তেন। আজ তিনি গাছের মতােই অচল; ছবির মতাে স্থির; কিন্তু ঘুম তার কাছে দূর্লভ হয়ে গেছে । স্লিপিং পিল ছাড়া ঘুম আসে না ।
কয়েক ঘণ্টা আগে হাউজ-নার্স ঘুমের বড়ি খাইয়ে দিয়ে গেলে একটা ঘাের ঘাের ভাব এসে ভর করেছিলাে দু’চোখের পাতায়। পাশের ঘর থেকে পরিচিত একটা শব্দ শােনা যাচ্ছে। এই শব্দটিই তার স্বল্পদৈর্ঘের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। খুব ক্ষীণ হলেও কানে বেশ পীড়া দিচ্ছে। সেটা। ইদানিং তার ইন্দ্রিয়গুলাে আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রখর হয়ে উঠেছে । নিঃশব্দের মধ্যেও অনেক শব্দ শুনতে পান। এমন অনেক কিছু বুঝতে পারেন যা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় । চারপাশের অনেক কিছুই তার কাছে এখন নতুন মাত্রায় উপস্থিত হয়। কোনাে ঘটনা ঘটার আগেই তিনি টের পেয়ে যান। ঠিক এরকম
একটি অনুভূতি এখন তার হচ্ছে।
নেমেসিস মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বেগ বাস্টার্ড সিরিজ
অবশ্য কখনও কখনও তার মনে হয় তিনি আসলে সন্দেহবাতিকতায় ভুগছেন। সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বুঝি, কিংবা পুরােটাই তার বিভ্রান্তি । হেলুসিনেশন? তিনি কোনাে উপসংহারে আসতে পারেন না ।
নারী কণ্ঠটা খুবই পরিচিত। পুরুষ কণ্ঠটা চেনার চেষ্টা করলেন। তাদের উচ্ছ্বাসের প্রকাশ তাকে ঈর্ষাকাতর করে তুললাে, কিন্তু অনেক দিন পরে, তিনি বেশ অবাক হয়েই টের পেলেন, উত্থান ঘটেছে । এরকম নিশ্চল-নিথর দেহে এতাে তীব্র আর অস্বাভাবিক উত্থান ঘটলাে বলে তিনি বিস্মিতই হলেন । মানুষ খুবই বিচিত্র। মস্তিষ্কের চেয়ে তার শরীর কোনাে অংশে কম বিচিত্র নয়। বিগত এক বছরের এই প্রথম এরকমটি হলাে । সেটাও কিনা এরকম অদ্ভুত এক
পরিস্থিতিতে! নারী কণ্ঠটা এখন বেশ তুঙ্গে উঠে গেছে। পুরুষটি অনেক বেশি সচেতন আর সতর্ক; নিজের সমস্ত আবেগ দমিয়ে রেখেছে সে। চোরেরা একটু বেশিই সতর্ক থাকে, কথাটা যেনাে তার আড়ষ্ট ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে প্রায় উচ্চারিত হয়েই যাচ্ছিলাে।একটু পর আর কোনাে সাড়া শব্দ নেই । হয়ে গেছে। তিনি ভাবতে লাগলেন তারা এখন কী করছে। এরকম সময় তিনি কি করতেন? একটা সিগারেট ধরাতেন। নয়তাে একেবারে চুপ মেরে পড়ে থাকতেন বিছানায়। আর গােলনূর?
সঙ্গে সঙ্গে আরাে অসংখ্য মুখ তার মনের পর্দায় ভেসে উঠলাে। ইচ্ছে করেও তিনি সেইসব মুখ কোনােভাবেই সরাতে পারলেন না। একেকটা মুখ একেকটা দৃশ্যের অবতারণা করছে । আফিয়া, মিতুল, শর্বরী, রিমি, মেরি, ইরা…! মাথাটা ঝাকিয়ে এইসব নাম আর দৃশ্যগুলাে বিদায় করতে চাইলেন, কিন্তু সেই সাধ্য তার নেই। এখন আর তিনি ইচ্ছেমতাে নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়তে পারেন না। আজকাল তার কাছে সবচাইতে ভয়ংকর মুহূর্ত হলাে এটিই । স্মৃতির উপরে মানুষের নিয়ন্ত্রণ যে কতাে কম সেটা এখন এই অবস্থায় না এলে হয়তাে কখনই বুঝতেই পারতেন না।
আজকাল শৈশরের কথা খুব মনে করতে চান, কিন্তু সেই স্মৃতি এতােটাই ঝাপসা হয়ে গেছে যে, সেটা আরাে বেশি পীড়াদায়ক ঠেকে তার কাছে। অথচ কোনােরকম প্রচেষ্টা ছাড়াই তিক্ত আর নষ্ট স্মৃতিগুলাে অযাচিতভাবে এসে পড়ে ।
আরেকটা শব্দে তার চিন্তায় ছেদ ঘটালাে-টয়লেট ফ্লাশ করার শব্দ-কে করছে? পুরুষ আর নারী কণ্ঠের মৃদু ফিসফিসানি শােনা যাচ্ছে এখন। তারা কথা বলছে। এসবের পরে কথা বলার কোনাে মানে হয় না। তিনি নিজে এরকম মুহূর্তে কোনাে কথা বলতেন না। পর পর কয়েকটা সিগারেট শেষ করে ঘুমিয়ে পড়তেন অথবা নতুন কোনাে আইডিয়া মাথায় চলে এলে লিখতে বসে যেতেন।
করাচি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বেগ বাস্টার্ড সিরিজ pdf
নারী-পুরুষের ফিসফিসানিটা এখনও চলছে। চাপা কণ্ঠে কী নিয়ে যেনাে কথা বলছে তারা। আস্তে আস্তে তার হাতের পশম কাটা দিয়ে উঠলাে। শরীরে এক ধরণের অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে। আজকাল এই ব্যাপারটা নিয়ে ভেতরে ভেতরে
বেশ ভয়ে থাকেন। প্রায়ই মনে হয় তার চারপাশের মানুষজন তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। তার এই সন্দেহটা কি সম্পূর্ন অমূলক? ব্যাখ্যা করে একটা শব্দ হলে তার ইন্দ্রিয় আবারাে সজাগ হয়ে উঠলাে। এই ঘরের জমিনটা যেনাে তার নিজের শরীর । কেউ এখানে পদার্পণ করলে তিনি টের পেয়ে যান। এখনও তার সেরকম অনুভূতি হচ্ছে। অন্য যে কেউ হলে এই
সামান্য শব্দ নিয়ে মাথা ঘামাতাে না-একটা বেড়াল কিংবা বাতাসের ঝাপটা। অথবা সবটাই তার বিভ্রান্তি। হেলুসিনেশন? তার সবচাইতে প্রিয় শব্দ। এই শব্দটাকে তিনিই জনপ্রিয় করেছেন । মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ শােনা যাচ্ছে এখন। খুবই মৃদু। একেবারে কাছ থেকে! তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন না। এটা তার পক্ষে সম্ভবও নয় । পুরাে শরীরের মধ্যে ডান হাতটাই সচল আছে, বাম হাতটা থেরাপি করার পরএখন সামান্য নড়াচড়া করতে পারেন। অনেকের কাছে এটি অলৌকিক একটি ব্যাপার। এর ফলে তার লেখালেখিতে কোনাে ছেদ পড়ে নি, বরং আগের যেকোনাে সময়ের চেয়ে তার লেখার পরিমাণ বেড়ে গেছে। আগে হাতে লিখলেও এখন ল্যাপটপে লেখেন। হাতে লিখতে গেলে বেশিক্ষণ লিখতে পারেন না। সারা
দিনই এখন লেখেন।
নেক্সাস করাচি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বেগ বাস্টার্ড সিরিজ pdf
ঘরে কোনাে বাতি জ্বলছে না। আজ পূর্ণিমা । দক্ষিণের বেলকনির স্লাইডিং ডােরটা খােলা থাকায় বাইরে থেকে জ্যোৎস্না এসে ঘরে ঢুকেছে। এরকম জ্যোৎস্না সব সময়ই তার ভালাে লাগে, কিন্তু আজকে তার কাছে এটা অসহ্য
লাগছে । হঠাৎ জ্যোৎস্নার সেই মৃদু আলােতে একটা আবছায়া মূর্তি তার সামনে এসে দাঁড়ালাে। কালাে পােশাক পরার কারণে স্পষ্ট বােঝা যাচ্ছে না। মুখটা দেখার জন্যে চোখ কুচকালেন তিনি কিন্তু চশমা ছাড়া যে এই স্বল্প আলােতে কিছু
দেখবেন না সেটা বুঝে ফেললেন সঙ্গে সঙ্গে।
কনফেশন করাচি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বেগ বাস্টার্ড সিরিজ pdf
সব মেনে নিয়েছেন এরকম একটি ভঙ্গী করে নিস্তেজ হয়ে গেলেন। দীর্ঘ দিন এরকম মুহূর্তের জন্যে অপেক্ষা করেছেন-চূড়ান্ত পরিণতির সময় একেবারে স্বাভাবিক আর স্থির থাকবেন । মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বেঁচে থাকার জন্যে কোনােরকম পাগলামী করবেন না । অন্তিম মুহূর্তটি প্রজ্ঞা আর বিচক্ষণতার সাথে গ্রহণ করবেন। “কে?” অলৌকিকভাবে কথাটা উচ্চারণ করলেন। দীর্ঘ সময় অব্যবহৃত থাকার ফলে কণ্ঠটা ফ্যাসফ্যাসে শােনালাে । বিস্ময়করভাবেই তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লােকটি চমকালাে না বলে তিনি অবাকই হলেন । দ্বিতীয়বার কিছু বলার চেষ্টা করলেন কিন্তু গলা দিয়ে কোনাে শব্দ বের হলাে। লােকটা ঠায় দাঁড়িয়ে কী যেনাে ভাবছে। এক সেকেন্ড । দুই সেকেন্ড । তিন সেকেন্ড…
একেবারেই নড়ছে না। তিনিও অপেক্ষা করতে লাগলেন।
এবার আস্তে করে কাছে এসে হকের মুখ চেপে ধরলাে লােকটা। লেখকের ডান হাত লােকটার কজি ধরে ফেললাে সঙ্গে সঙ্গে, অনেকটা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই, কিন্তু লেখকের শক্তিহীনতার জন্যে তাতে কোনাে প্রতিরােধ তৈরি হলাে না।
আরেকটা হাত দিয়ে অজ্ঞাত লােকটা সজোরে লেখকের বুকের বাম দিকে, ঠিক যেখানটায় বছরখানেক আগে ওপেনহার্ট সার্জারি হয়েছে, সেখানে ঘুষি চালালাে ।
লেখক নিজে থেকে, নয়তাে ঘুষির কারণে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললেন ।ঘন অন্ধকারে তার সমস্ত জগৎটি ঢেকে গেলাে নিমেষে। সেই গাঢ় অন্ধকারে শৈশবের কথা ভাবার চেষ্টা করলেন তিনি। শেষ মুহূর্তে কিছু সুন্দর দৃশ্য দেখতে চাইলেন। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। খুব সম্ভবত আরেকটা ঘুষি তার বুকের বাম দিকে করা হয়েছে, কিন্তু সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হতে পারলেন না। কেবল বুঝতে পারলেন পুরাে বুকটা চেপে আসছে চারপাশ থেকে। যেনাে কেউ দু’হাতে তার বুকটা সজোরে চেপে ধরছে। কয়েক সেকেন্ড পরে তার শরীরটা উধাও হয়ে গেলাে। শুধু মস্তিষ্কটা কাজ করছে এখন। তিনি বুঝতে পারছেন মৃত্যু ধেয়ে আসছে। এই অভিজ্ঞতাটি কেমন সেটা নিয়ে অনেক ভেবেছেন, নিজের সৃষ্ট অনেক চরিত্রের মৃত্যু দৃশ্য নির্মাণ
করতে যেয়ে কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন, কিন্তু এখন তার যে অনুভূতি হচ্ছে সেটা বর্ণনাতীত । অনিবৰ্চনীয়! এই অভিজ্ঞতা পৃথিবীর কেউই বর্ণনা করে যেতে পারে ।
কতােক্ষণ লাগবে? ব্যাপারটা দ্রুত শেষ হয়ে গেলে তার মুক্তি ঘটবে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি শেষ হচ্ছে না। শৈশবের একটা ছবি ভাবার চেষ্টা করলেন। আসছে না। নিজের এই অবস্থাকে ভুলে সুন্দর কোনাে মুহূর্ত ভাবতে পারছেন না। এখন বুঝতে পারছেন
সত্যের কোনাে মূল্য নেই । অন্তত এই মুহূর্তে তার কাছে সত্যের প্রয়ােজন নেই । প্রয়ােজন একটা সুন্দর মুহূর্তের । সেরকম কোনাে সুন্দর সুখস্মৃতির জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠলেন ।
Nexus by nazim Uddin বেগ বাস্টার্ড সিরিজ Pdf Download
অবশেষে ছবিটা ভেসে উঠলাে। কিন্তু খুব বেশি সময় কি আছে? একটা সরু খালে দুটো বাচ্চা ছেলে ডিঙ্গি নৌকায় করে শাপলা ফুল তুলছে। আর একে অন্যের দিকে পানি ছুড়ে মারছে… ঠিক একই সময়ে, ভিটা নুভা অ্যাপার্টমেন্টের সামনের রাস্তার ফুটপাতে অল্পবয়সী এক ছেলে দাঁড়িয়ে আছে । তার দৃষ্টি রাস্তার ওপারে ভিটা নুভার ছয় তলার কর্নার
ফ্ল্যাটের বেলকনির দিকে। গভীর মনােযােগের সাথে কী যেনাে দেখছে । ছেলেটার ভাবভঙ্গী দেখে যে কেউ সন্দেহ করবে। সত্যি বলতে কি, ছেলেটা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই । রাত ১টা ৫৫ মিনিট । পুরাে শহর ঘুমিয়ে আছে। শহর কখনও ঘুমায় না-
ঢাকার জন্যে এ কথাটি প্রযােজ্য নয় । এক কোটি লােকের এই শহর মাঝরাতের দিকে প্রায় ভুতুরে শহরে পরিণত হয়। যদিও এর আসল এবং অদ্ভুত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে নিঝুম রাতেই। সেটা নিশাচরেরাই ভালাে জানে।
প্রশস্ত রাস্তাগুলাে একেবারে ফাঁকা সে কথা বলা যাবে না, দু’য়েকটা ভারিযানবাহন আর পুলিশের টহল গাড়ি আসছে যাচ্ছে। আধ ঘণ্টা আগে স্থানীয় থানার চারটি টহল গাড়ির একটি-চার্লি ফোর-এই রাস্তায় টহল দিয়ে গেছে । আরেকবার এখান দিয়ে গাড়িটা যাবে। আজকের রাতের ডিউটি শেষ করে একটু পরে থানায় ফিরে যেতে হবে এ পথ দিয়েই। চার্লি ফোর-এর দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর এলাহী নেওয়াজ আরেকটা বেনসন হেজেস ধরালাে। এটা তার বিশেষ একটি সিগারেট। কাটাবন থেকে সন্ধ্যার দিকে উপঢৌকন হিসেবে পেয়েছে। রাতের ডিউটি দিতে তার একটুও ভালাে লাগে না। কিন্তু পুলিশের চাকরি করলে ভালাে-মন্দ বলে কিছু থাকতে নেই। যে লােককে এই চাকরিটা পাইয়ে দেবার জন্যে দেশের জমিজমা বেচে নগদ দুই পেক্ষ টাকা দিয়েছিলাে তাকে যদি এখন হাতের কাছে পেতাে… আর বেশি ভাবতে পারলাে না। “গাড়ি থামাও!” গর্জে উঠলাে এলাহী। পিকআপ ভ্যানের ভেতরে বসে থাকা তিনজন কনস্টেবল আর ড্রাইভার ওয়াদুদ ১মকে গেলাে।
“কি হইছে, স্যার?” পাশে বসে থাকা ড্রাইভার ওয়াদুদ বললাে । “আরে, আগে গাড়িটা থামাও।” বলেই সে রাস্তার ডান দিকে ইঙ্গিত •রলাে । ড্রাইভার দৃশ্যটি দেখার আগেই গাড়িটা বেশ কিছুটা দূরে চলে এসেছে। ব্যাখ্যা করে গাড়ি ব্রেক করার যে শব্দ হলাে তাতে করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি একটুও চমকালাে না। এটা একেবারেই অস্বাভাবিক আচরণ । এলাহী নিজের পিস্তলটা হােলস্টার থেকে বের করে হাতে নিয়েই ক্ষান্ত নাে না, সেফটি লক্টাও খুলে ফেললাে। এক অজানা আশংকা তার ইন্দ্রিয়কে সজাগ ক’রে তুলেছে। ইন্সপেক্টর ভ্যানের পেছনে বসা তিনজন ••স্টেবলকে ইশারা করলে তারাও পুলিশ বাহিনীতে সদ্য বিতরণ করা অত্যাধুনিক মার্ক ফোর রাইফেল নিয়ে ভ্যান থেকে নেমে পড়লাে। তাদের
তিনজনের কেউই এখন পর্যন্ত এই অস্ত্রব্যবহার করে নি। তাদের অভিজ্ঞতা •ণতে প্রথম মহাযুদ্ধে ব্যবহার করা থ্র নট থ্র রাইফেল । এখন এই নতুন অস্ত্র তাদেরকে দেয়া হলেও ফায়ারিং প্র্যাকটিসে পাঁচটি গুলি করা ছাড়া সত্যিকারের (কোনাে অ্যাকশনে ব্যবহার করা হয় নি। আজকেও যে করা হবে তার কোনাে সম্ভাবনাই তারা দেখতে পাচ্ছে না।
একটা নিরীহ মাল। তিনজন কনস্টেবল আর একজন পিস্তল হাতে উদ্যত টুগারহ্যাপি ইন্সপেক্টরকে মােকাবেলা করা তার পক্ষে কখনও সম্ভব হবে না ।
কন্ট্রাক্ট Beg Bastard Series Pdf Download
এলাহী পিস্তলটা নিচু করে রেখে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলাে। তাকে •]সরণ করলাে তিনজন কনস্টেবল। তারা যখন মাত্র দশ গজ দূরে তখনই (টা তাদেরকে দেখতে পেলাে। ছয় তলার বেলকনির দিকে এমনভাবেএকদৃষ্টে চেয়ে ছিলাে যে এতােক্ষণ কিছুই খেয়াল করে নি। পুলিশ দেখেই ভড়কে গেলাে সে। সব দুষ্কৃতিকারীই পুলিশ দেখলে ভড়কে যায়।
“অ্যাই ছেলে, এতাে রাতে এখানে…” এলাহী বাক্যটি শেষ করার আগেই ছেলেটি তাদেরকে অপ্রস্তুত করে আচমকা দৌড় দিলাে। এলাহী ছেলেটার পেছন পেছন দৌড়ে গেলাে না। আটত্রিশ বছর বয়সে তার ভূড়ির অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে এই ছােকরার পেছনে দৌড়ে সে কুলাতে পারবে না। “শালারে ধরাে,” তিনজন হতভম্ব কনস্টেবল, যারা অফিসারের উপস্থিতিতে
কোনাে রকম নিজস্ব বিচারবুদ্ধি প্রয়ােগ করতে অভ্যস্ত নয়, এলাহী তাদেরকে নির্দেশ দিলাে। কনস্টেবল তিনজন নিজেদের ভারি রাইফেলটা কোনাে রকম সামলে নিয়ে ছেলেটার পেছনে ছুটলাে। ইতিমধ্যে ছেলেটা বেশ দূরে চলে গেছে। এলাহী ভ্যানে উঠতে উঠতে ড্রাইভারকে বললাে, “ওয়াদুদ, জলদি চলাে।” গাড়ির ইঞ্জিন চালুই ছিলাে, মুহূর্তে সেটা ছুটতে শুরু করলাে।
পানির ঝাপটা মুখে এসে লাগতেই অদ্ভুত এক ভালাে লাগার অনুভূতিতে আক্রান্ত হলেন তিনি। এই দম বন্ধ অবস্থায়, সুতীব্র যন্ত্রণায় এরকম অনুভূতি তার কাছে স্বর্গের মতাে মনে হচ্ছে। মনেপ্রাণে তিনি চাচ্ছেন মৃত্যু যেনাে দ্রুত তাকে গ্রাস করে।
শৈশবের ছবিটা মিইয়ে গিয়ে একে একে অসংখ্য ছবি ভেসে উঠলাে তার মনের পর্দায়। কোনােটা সুখের, কোনােটা সুতীব্র দুঃখের, আবার কোনােটা অনুশােচনার । সবই জীবনের অংশ । বুকটা আরাে চেপে এলাে। এখন তার মনে হচ্ছে সমস্ত প্রাণটা মুখ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। বমি করার মতাে একটা অনুভূতি হলাে । আমি কি বমি করছি? এ ক’দিন তিনি নিজেকে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত বলে মনে করেছিলেন, আজকের এই ঘটনায় তার সেই ধারণার অবসান হয়েছে। এই একটা সুখস্মৃতি তাকে শেষবারের মতাে কিছুটা হলেও শান্তি দিলাে, কিন্তু এই মুহূর্তের সব কিছুই খুব বেশি ক্ষণিকের । একটা মুখ ভেসে উঠতেই তার সব শান্তি তিরােহিত হয়ে গেলাে নিমেষে। কতাে মায়াবী মুখটা! একসময় এই মুখটি তাকে কিভাবেই আন্দোলিত করতাে। মুখটার করুণ অভিব্যক্তি তাকে পীড়িত করলাে সঙ্গে সঙ্গে। কতাে গল্প জড়িয়ে আছে একে নিয়ে! এই মুখটা এক সময় তাকে অনুপ্রেরণা দিতাে। জাগিয়ে তুলতাে। এক নজর দেখার জন্যে ছুটে আসতে পারতেন হাজার মাইল দূর থেকে, কিন্তু এখন! মুখটার মলিনতা, বিমর্ষতা তাকে মৃত্যুর চেয়েও সুতীব্র যন্ত্রণা দিচ্ছে। তিনি এ থেকে পরিত্রাণ চান। মৃত্যুর কৃষ্ণ গহ্বরে হারিয়ে গিয়ে এ
থেকে নিষ্কৃতি চান। লেখক মারা গেছে কিনা নিশ্চিত হবার জন্যে ঘাতক লেখকের মুখ থেকে তার বাম হাতটা সরিয়ে একটু ঝুঁকে এলাে। লেখকের চোখ দুটো বন্ধ । নিস্তেজ শরীরটায় কোনাে প্রাণ আছে কিনা বােঝা যাচ্ছে না। বুকের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাে শ্বাসপ্রশ্বাসে আন্দোলিত হচ্ছে না সেটা।
কিন্তু হঠাৎ করেই যেনাে এই জড়বৎ মৃতদেহের মুখটা ক্ষণিকের জন্যে সজীব
হয়ে উঠলাে। তবে এতাে অল্প সময়ের জন্যে যে ঘাতককে তেমন কিছু করতে হলাে না।
লেখক শেষবার যে কথাটি বললেন সেটা এই পৃথিবীর কেউই হয়তাে বুঝতে পারবে না। এরকম মুহূর্তে এটাকে নিছক অসংলগ্ন কোনাে কথা বলেই মনে হবে। তিনি ছাড়া এ ঘরে একমাত্র যে ব্যক্তিটি আছে কথাটা নিশ্চয় তাকে উদ্দেশ্য
ক’রে নয়। খুনি নিজেও কথাটা শুনে প্রথমবারের মতাে একটু চমকে উঠলাে-
“…আমাকে ক্ষমা করে দিও!”