Books
আমি বীরাঙ্গনা বলছি Pdf free Download
Ami Birangona bolchi pdf download – আমি বীরাঙ্গনা বলছি নীলিমা ইব্রাহিম pdf free download
বইয়ের নামঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি
লেখকঃ নীলিমা ইব্রাহিম
ধরণঃ উপন্যাস
প্রকাশকালঃ ১৯৯৮
প্রকাশকঃ জাগৃতি প্রকাশনী
নীলিমা ইব্রাহিম বই, credit; নবনীতা দত্ত তিথি
এই বই পড়ার সময় অনবরত চোখ দিয়ে পানি পড়েছে। বিরাঙ্গনাদের মাঝে নিজের কাউকে কল্পনা করার সাহস ও হয়নি। এতটা কষ্ট মানুষ কিভাবে সইতে পারে! কিভাবে যে তারা সয়েছিল! অথচ আমরা এখন অবধি সেই কষ্টের মূল্য দিতে শিখিনি।
“আমি বীরাঙ্গনা বলছি” বাংলা সাহিত্যের রাজ্যে এক অসাধারণ উপন্যাস, যেখানে বর্ণনা করা হয়েছে বাংলার স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যেসব নারী অপমানিত, অবমানিত ও ধর্ষিত হয়েছেন, যারা স্বামী-সন্তান, মাতা-পিতা ও ঘনিষ্ঠজনকে হারিয়ে ত্যাগ স্বীকার করেছেন সেসব মহীয়সী নারীদের কথা।
লেখিকার সাবলীল বর্ননাতে উঠে এসেছে এক কালো অধ্যায়ের বাস্তব হৃদয় বিদারক চিত্র। ১৬ই ডিসেম্বরে আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল ঠিকই কিন্ত এইসব নারীরের যুদ্ধ তখনো শেষ হয়নি, হয়ত তখনি শুরু হয় তাদের আসল যুদ্ধ ।
অনেক দেশেই যুদ্ধ হয়েছে আরো অনেক দেশেই হবে তবে সবক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত থাকবে নারীরাই।ভিনদেশি শত্রুর উতপাত তো সাময়িক কিন্ত নিজ দেশের,নিজ সমাজের,নিজ ঘরের শত্রু থেকে বাঁচার উপায় কি??
নীলিমা ইব্রাহিমের বই টি পড়ে অবাক হতে হয়। আশ্চর্য!!!আমাদের সমাজ এরকম?? যেখানে সবাই ভুক্তভোগী সেখানে নারীর প্রতি মানুষ কি একটু সহানুভুতি দেখাতে পারেনা? লেখিকা কেন এমন একটি বই লিখতে আগ্রহী হলেন তা জানা যায় বইটির ভুমিকা থেকে।
বইটির ভূমিকায় লেখিকা লিখেন,
” ১৯৭২ সালে যুদ্ধজয়ের পর যখন পাকিস্তানি বন্দিরা ভারতের উদ্দেশ্যে এ ভূখণ্ড ত্যাগ করে, তখন আমি জানতে পারি প্রায় ত্রিশ-চল্লিশজন ধর্ষিত নারী এ বন্দিদের সঙ্গে দেশত্যাগ করছেন। অবিলম্বে আমি ভারতীয় দূতাবাসের সামরিক অফিসার ব্রিগেডিয়ার অশোক ডোরা এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে নিয়োজিত মরহুম নুরুল মোমেন খান যাঁকে আমরা মিহির নামে জানতাম তাঁদের শরণাপন্ন হই। উভয়েই একান্ত সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে এসব মেয়েদের সাক্ষাৎকার নেবার সুযোগ করে দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নওসাবা শরাফী, ড. শরীফা খাতুন ও আমি সেনানিবাসে যাই এবং মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা লাভ করি।
পরে নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে নারকীয় বর্বরতার কাহিনি জানতে পারি। সেই থেকে বীরাঙ্গনাদের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মে। নানা সময়ে দিনপঞ্জিতে এঁদের কথা লিখে রেখেছিলাম। ইচ্ছা ছিল, জনসমাজে এঁদের পরিচয় তুলে ধরার। এ ক্ষুদ্র গ্রন্থ সে আগ্রহেরই প্রকাশ। “
১৯৯৪ সালে লিখা এ ভূমিকায় লেখিকা প্রকাশ করেন বইটির তৃতীয় খণ্ড প্রকাশের ইচ্ছা। কিন্তু ১৯৯৭ সালে তিনি জানান তিনি তৃতীয় খণ্ড প্রকাশ করতে অপারগ। এক্ষেত্রে তিনি দুটি কারণ দেখান। প্রথম কারণ শারীরিক। বীরাঙ্গনাদের নিয়ে লিখতে গিয়ে লেখিকার হৃদয় ও মস্তিষ্কের উপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এখানে দ্বিতীয় কারণটি হলো বর্তমান সমাজের রক্ষণশীল মনোভাব। বর্তমান সমাজ ৭২ এর সমাজের চেয়ে এদিকে অধিকতর রক্ষণশীল। বীরাঙ্গনাদের পাপী বলতেও তারা দ্বিধাবোধ করেন না।
যাদের মনে একটু হলেও পাকিস্তানপ্রেম রয়েছে তারা অবশ্যই এবং অবশ্যই বইটি পড়ে দেখবেন, প্রতি বীরাঙ্গনার মাঝে নিজের মাকে, নিজের বোনকে কল্পনা করে দেখবেন।
১৯৯৭ থেকে ২০২১ সমাজের এ রক্ষণশীল মনোভাব হয়তো এখনো কাটেনি। হয়তোবা আগের চাইতে কিছুটা বেড়ে গেছে। এখন ধর্ষণের কারণ হিসেবে ধরা হয় মেয়েদের পোশাক, মেয়েদের চলাফেরা, ঘর থেকে বের হওয়া। অথচ এ দেশে দেড় বছরের কন্যাশিশুও ধর্ষিত হয়।
তাই আমার মনে হয় যতদিন পর্যন্ত সমাজ ধর্ষণের এক এবং একমাত্র কারণ ধর্ষকের বিকৃত মনোভাব স্বীকার না করতে পারবে ততদিন পর্যন্ত এ সমাজ বীরাঙ্গনাদের আত্মত্যাগকে উপলব্ধিও করতে পারবে না। ততদিন পর্যন্ত এ সমাজে বীরাঙ্গনারা প্রকৃত সম্মান পাবেন না। ততদিন পর্যন্ত লেখিকার এ বই লিখা সার্থক হয়ে উঠবে না।