ইতি স্মৃতিগন্ধা সাদাত হোসাইন PDF Download(Full)
পারু হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছতে মুছতে হেসে ফেলল। তারপর বলল, ‘এই কটা টাকায়তো অর্ধেকটা মেলা কেনা যাবে না।” “তাহলে? ম্লান গলায় বলল ফরিদ। পারু এই ভিড়ের মধ্যে ফরিদের আরো গা ঘেঁষে দীড়াল। তারপর বলল, ‘এই টাকায় পুরো পৃথিবীটা কেনা যাবে। আস্ত পৃথিবীটা ।” কথাটায় কী ছিল কে জানে! ফরিদ এক হাত দিয়ে পারুকে তার আরো কাছে টেনে নিতে চাইল। কিন্তু পারল না। তার আগেই পেছন থেকে আসা তীব্র গতির ভিড়ের স্রোতে হঠাৎ ছিটকে গেল পারু। তখন বিকেল প্রায় মরে এসেছে। সন্ধ্যা নামাবে বলে অপেক্ষা করছে অন্ধকার। তবে সেই অন্ধকারের অপেক্ষাকে আরো প্রলফিত করে দিয়ে মেলার মাঠে একে একে জ্বলে উঠতে লাগল রংবেরঙের আলো । সেই আলোয় আরো রঙিন, আরো ঝলমলে হয়ে উঠতে লাগল চারপাশ । বিচলিত ফরিদ পেছন ফিরে তাকাল ।
আর ঠিক তখুনি লম্বা, গৌর বর্ণের একজন লোককে কেন্দ্র করে একটা ভিড় এগিয়ে আসতে দেখল সে । লোকটার নাকের নিচে পাকানো গৌফ। মাথাভর্তি ঘন কালো চুল। পরনে ধবধবে সাদা সিক্কের পাঞ্জাবি। তিনি চারপাশটা দেখতে দেখতে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছেন। তার চোখে-মুখে স্পষ্ট পরিতৃপ্তির আভা । কয়েকজন দশাসই শরীরের লোক তার আগে আগে লাঠি হাতে লোকজন সরিয়ে জায়গা করে দিচ্ছে এ! কারণেই এদিকটাতে হঠাৎ ছোটাছুটি বেড়ে গেছে। ভিড় বেড়েছে। পারু সেই ভিড়েই ছিটকে গেছে। ফরিদ খানিক পেছনে ছুটে গিয়ে তাকে খুঁজে বের করল। তারপর তার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো মেলা থেকে দূরে । এখানে তেমন কোলাহল নেই। সবকিছু শান্ত, চুপচাপ। কিন্তু তারপরও পারুর চোখে-মুখ থেকে ভয়ের ছাপটা যেন আর গেল না। সে শক্ত করে ফরিদের হাত ধরে বসে রইল। ফরিদ বলল, “ভয় পেয়েছিলে? পারুর ঠোট কীপছে। সে সম্ভবত ভিড়ের ধাক্কা, হুড়োহুড়িতে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। তার লাল শাড়িতে ধুলোবালি লেগে আছে। ফরিদ তাকে আরো খানিকটা দূরে সরিয়ে নিয়ে এলো। এখানটাতে একদমই মানুষ নেই। পাশ দিয়েই বয়ে যাচ্ছে বংশী নদী। এই সময়ে নদী খুব একটা ভরভরন্ত না হলেও জলের অভাবও তেমন নেই। বরং মেলা থেকে ঠিকরে আসা রংবেরঙের আলো, নদীর ঘাটজুড়ে বাধা অসংখ্য নৌকা আর মাঝিদের হৈ-হুল্লোড়ে বেশ একটা জমজমাট ভাব। যদিও সন্ধ্যার ম্লান আলোয় বিশাল বংশী নদীর ওপারটা ঠিক ঠাওর করা যাচ্ছে না। ফরিদ পারুকে একটা গাছের তলায় বসাল। তারপর বলল, ‘কী হলো, তোমাকে এত ফ্যাকাশে লাগছে কেন?’ পারু চেষ্টা করছে নিজেকে সামলে নেয়ার । কিন্তু পারছে না।
Pdf Download link